প্রকাশিত :  ০৭:৩৯
২৩ নভেম্বর ২০২২
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৪৪
২৩ নভেম্বর ২০২২

রাশিয়া থেকে লুকিয়ে তেল কিনছে যুক্তরাজ্য!

রাশিয়া থেকে লুকিয়ে তেল কিনছে যুক্তরাজ্য!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন সংঘাতের জেরে রাশিয়ার ওপর কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু নিজেদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে ঠিকই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে দেশটি। ট্যাঙ্কার ট্র্যাফিক ডেটা এবং ট্রেড স্ট্যাটিস্টিকসের সূত্রে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কমপক্ষে ৩৯টি তেলের চালান রাশিয়া থেকে কিনেছে যুক্তরাজ্য। তবে এসব চালানের নথিপত্র বলছে, এগুলো রাশিয়া নয়, অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।  

রাশিয়ার তেলের চালানগুলো যুক্তরাজ্যের নামে নিবন্ধিত নয়। তবে তা জাহাজে থেকে জাহাজে স্থানান্তিত হয়ে যুক্তরাজ্যের বন্দরে পৌঁছে যাচ্ছে। মূলত যখন বড় ট্যাঙ্কারগুলো তার আকারের কারণে বন্দরে ভিড়তে পারে না, তখন সেসব ট্যাঙ্কারের পণ্যগুলো ছোট ছোট জাহাজে করে বন্দরে সরবরাহ করা হয়। আর এ পদ্ধতি সদ্ব্যব্যবহার করেই রাশিয়া থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে জ্বালানি তেল কিনছে যুক্তরাজ্য। এভাবে প্রায় ২৩৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রাশিয়ান তেলের চালান যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।  

সানডে টাইমসের অনুসন্ধান বলছে, এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে শিপিং কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের চালানের প্রকৃত উৎস লুকাতে পারে। এ উপায়ে তারা প্রকৃত উৎস নিবন্ধনে উল্লেখ না করে যে দেশটি চালানটি ডিসপ্যাচ করেছে তার নাম উল্লেখ করে। যেমন- যদি একটি জার্মান সংস্থার মাধ্যমে রাশিয়ার তৈরি করা কোনো পণ্য যুক্তরাজ্যের বন্দরে আসে, তাহলে তা রাশিয়ার নামে নিবন্ধিত না করে জার্মানির নামে নিবন্ধন করা হয়।

দ্য সানডে টাইমস দাবি করছে যে তারা কয়েক ডজন রাশিয়ান তেলের চালান ট্র্যাক করতে পেরেছে যেগুলো গত মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যের বন্দরে পৌঁছেছে। তবে নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা। নথিপত্র মোতাবেক সেসব চালান জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ থেকে এসেছে। এর মধ্যে আবার অন্তত ১৩টি চালান জুন ও জুলাই মাসে এসেছে।

এদিকে ইউকে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) তেল আমদানির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এ মাসগুলোয় রাশিয়া থেকে কোনো তেল ক্রয় করেনি যুক্তরাজ্য। মেরিটাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযানের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর পর থেকেই জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তর করে তেল কেনার পদ্ধতি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।শিপিং জার্নাল লয়েডস লিস্টের এনার্জি এবং শিপিং বিশ্লেষক মিশেল উইজ বকম্যান বলেন, ‘শিপ টু শিপ বা জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তর পদ্ধতি চালানের গন্তব্য এবং পণ্যের উৎস লুকিয়ে রাখার বা ধোঁয়াশা করার জন্য সত্যিই একটি দরকারি পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। এটি প্রথমে ইরানিরা শুরু করেছিল। পরে ভেনিজুয়েলা এটিকে নিঁখুত করেছিল। তারপরে রাশিয়া এটি ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে।’

রিফিনিটিভের শিপ টু শিপ স্থানান্তর নিরীক্ষা বলছে, মার্চ মাস থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত এমন প্রায় ২৬৭টি চালান বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে সমুদ্র পথে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপরে যুক্তরাজ্যের একটি নিষেধাজ্ঞা আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মেরিটাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাজ্যের পক্ষে রাশিয়ার তেলের সরবরাহ আসা বন্ধ করা কঠিন হবে। এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল দেশটিতে আসবেই। এমনকি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরও এমন লুকিয়ে তেল কেনা অব্যাহত থাকবে।  


Leave Your Comments




বিশ্ব বাণিজ্য এর আরও খবর