প্রকাশিত : ১৩:৪৪
১১ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত কার্যদিবসে লেনদেনের চিত্র বিনিয়োগকারীদের মনে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। সূচকের ধারাবাহিক পতন, কম লেনদেন এবং ব্যাপক বিক্রয়চাপের কারণে আগামীকালও বাজারে সতর্ক প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ডিএসইএক্স সূচক ৫২৮৩.৭২ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা আগের দিনের তুলনায় ৫৪.১৪ পয়েন্ট বা ১.০১% কম। একই সঙ্গে ডিএসইএস ১.৩০% এবং ডিএস৩০ সূচক ০.৯০% কমেছে। এই পতন একদিনের নয়, বরং এটি বাজারের সামগ্রিক দুর্বলতার প্রতিফলন।
মোট ১,৭৬,৩১৯টি ট্রেডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৩০ কোটি টাকা, যা বাজারের আকারের তুলনায় অনেক কম। এই লেনদেনে ৭০টি কোম্পানির দর বাড়লেও ২৯০টি কোম্পানির দর কমেছে এবং ৩৩টি অপরিবর্তিত ছিল। এটি বাজারের ওপর বিক্রয়চাপের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
বাজার বিশ্লেষণ ও খাতভিত্তিক গতিপ্রবাহ
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ খাতের সূচকই নিম্নমুখী ছিল। তবে ব্যতিক্রম ছিল প্রকৌশল, খাদ্য ও সহযোগী, এবং কিছু ব্যাংক শেয়ার, যেগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে ছিল।
'মিউচুয়াল ফান্ড' এবং 'প্রকৌশল' খাত কিছুটা ইতিবাচক সাড়া দেখালেও, ব্যাংক, বস্ত্র, এবং ওষুধ খাতের ওপর চাপ অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে, মূল লেনদেনের তালিকায় এখনো বস্ত্র, ওষুধ ও রাসায়নিক, প্রকৌশল এবং জীবন বীমা খাতের শেয়ার শীর্ষে রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ পুরোপুরি হারায়নি এবং তারা 'ডিপ বাই'-এর সুযোগ খুঁজছেন।
প্রযুক্তিগত ইঙ্গিত: বাজার এখন সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি
ডিএসইএক্স সূচক বর্তমানে ৫২৮০-৫২৯০ পয়েন্ট অঞ্চলে অবস্থান করছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল হিসেবে কাজ করতে পারে। যদি এই লেভেল ভেঙে যায়, সূচক আরও ৫২০০-৫১৮০ পয়েন্ট পর্যন্ত নামতে পারে। তবে যদি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে কোনো ক্রয়চাপ দেখা যায়, বিশেষ করে ব্যাংক বা ওষুধ খাতে, তাহলে বাজার সাময়িকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা: আতঙ্ক নয়, সতর্কতা জরুরি
বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়, বরং এটি একটি স্বাভাবিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত। অনেক শেয়ার দীর্ঘ সময় ধরে কম দামে রয়েছে, ফলে ভালো মানের শেয়ারগুলো ধীরে ধীরে ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারে।
অন্যদিকে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আবেগপ্রবণ বিক্রি বাজারকে আরও নিচের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই এখন যেকোনো বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সতর্কতা, বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আগামীকালের সম্ভাব্য পূর্বাভাস
বাজারের প্রথম ভাগে কিছুটা চাপ অব্যাহত থাকতে পারে, কারণ পতনের ধারা থেকে বিনিয়োগকারীরা এখনো পুরোপুরি বের হতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় ভাগে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে, বিশেষত প্রকৌশল, ব্যাংক, ও ওষুধ খাতে।
যদি লেনদেনের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার ওপরে যায়, তাহলে বাজারে কিছুটা আস্থা ফিরে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে। সামগ্রিকভাবে, আগামীকাল সূচক -১০ থেকে +২০ পয়েন্টের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে, অর্থাৎ বাজার একটি সীমিত পরিসরে মিশ্র অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন এক সংবেদনশীল অবস্থায় আছে—অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা—সবকিছুই বাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে। আগামীকালকের বাজার হবে বিনিয়োগকারীদের মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষা। যারা আতঙ্কিত না হয়ে তথ্য ও বিশ্লেষণ দেখে বিনিয়োগ করবেন, তারাই দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন।