প্রকাশিত : ০৪:৩৫
০২ জানুয়ারী ২০২২
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৪৫
০২ জানুয়ারী ২০২২
ব্যবসায়ীদের রপ্তানি ও বাণিজ্যের প্রসারে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য গবেষণায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পণ্যের গুণগতমান ধরে রেখে আপনারা (ব্যবসায়ীরা) যেন আপনাদের বাজার ঠিক রাখতে পারেন, আরও উন্নত করতে পারেন। সেদিকে আপনারা অবশ্যই দৃষ্টি দেবেন। অর্থাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে।’ গতকাল ২৬তম ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০২২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গবেষণাকে গুরুত্ব দিই। আমার মনে হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের আরও গবেষণা দরকার। আমাদের পণ্যের চাহিদা এবং মান বিশেষভাবে নিরূপণ করা এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্যের মান ধরে রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পমালিক এবং উদ্যোক্তদের আমি অনুরোধ করব দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য আপনাদেরই উদ্যেগ নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে প্রযুক্তির যুগ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে আমরা কোনোভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
করোনার মাঝেও অর্থনীতিকে সীমিত আকারে হলেও এগিয়ে নেয়ায় তিনি শিল্প উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে মালিক-শ্রমিক সবাইকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতি কিন্তু একেবারে কখনও স্থবির হয়নি। স্বল্পমাত্রায় হলেও আমরা সব চালু রাখতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে পৃথিবীর বহু দেশ কিন্তু এ সমস্যায় পড়েছে। করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে তার সরকার প্রবৃদ্ধিকে ৮ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিল উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এটি অতিক্রমেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান কূটনীতিকে বাণিজ্যিক কূটনীতি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি ইতোমধ্যে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রত্যেকটি দূতাবাসকে সেভাবেই কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আরও সহজভাবে করতে পারি সে জন্য দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩ দেশের বিষয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষা সম্পন্ন করেছি।’
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এএইচএম আহসান অনুষ্ঠানে বক্তিতা দেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে রপ্তানি নীতি অনুযায়ী রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে ২০২২ ‘আইসিটি পণ্য ও সেবা’কে ২০২২ সালের জাতীয়ভাবে ‘বর্ষ পণ্য’ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে রপ্তানি হওয়া আইসিটি পণ্য ও সেবা খাত থেকে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে। এছাড়া করোনাকালীনও সার্বিক রপ্তানি বৃদ্ধির কথা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় রপ্তানি খাতের ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন, যা বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সময় কিন্তু আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের, সে কথা মনে রাখতে হবে। আর সেই সুযোগটাও আমাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, নিজের দেশের বাজার সৃষ্টি করার পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করা, তাদের ক্ষয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। কেননা আমাদের দেশের শিল্পায়নের ব্যাপক প্রসার ঘটবে তখনই যখন আমাদের নিজস্ব বাজার সৃষ্টি হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা এবং রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় কৃষি পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপরও ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গত বছর কভিড মহামারির কারণে মেলার আয়োজন করা সম্ভব না হলেও এবারই প্রথমবারের মতো স্থায়ী ভেন্যুতে পূর্বাচল নতুন শহরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা’ (ডিআইটিএফ)-২০২২ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।