প্রকাশিত :  ১৯:৫৩
০৬ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৫৪
০৬ অক্টোবর ২০২৫

সৃষ্টিকর্তার সন্ধান

রাতের আকাশ ভরে আছে অসংখ্য তারায়। রাফির মনে হল, ওই তারাগুলো যেন তার বুকের ভেতরকার জমে থাকা প্রশ্ন—উজ্জ্বল ঠিকই, কিন্তু উত্তরহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন পড়ে রাফি। আজও এফ. রহমান হলের ছাদে একা। বই খুলে রাখা, চোখে বইয়ের দিকে নেই—মনের গভীরে এক তৃষ্ণা, অজানা, অব্যক্ত।

'আল্লাহ যদি থাকেন, আমি তাঁকে দেখি না কেন?'—প্রশ্নটা রাফির মনে দিনের পর দিন গজাল ফুটিয়ে ওঠে।

যুক্তির দুনিয়ায় সে আশ্রয় খোঁজে—অস্তিত্ববাদ, নাস্তিক্য, যুক্তিবাদ, কোয়ান্টাম ধর্ম—সবই পড়েছে। কিন্তু পড়া যত বাড়ে, মনে শূন্যতা ততই গভীর হয়।

সেই রাতে বাতাসে ছিল এক ভিন্ন ধরনের নিস্তব্ধতা। হঠাৎ কানে এল যেন কার ফিসফিসানি—'তুমি চোখে আমাকে খুঁজছ, অথচ আমি তো আছি তোমার হৃদয়ের গহিনে।'

রাফি চমকে চারদিক তাকাল। কেউ নেই। আকাশের তারা যেন মুহূর্তে কাছে সরে এল। সে তখনো জানে না, এই একটা মুহূর্তই তার জীবনের গতিপথ বদলে দেবে।

পরদিন ক্লাসে অধ্যাপক সাদিক স্যার বললেন, 'আল্লাহকে প্রমাণে পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় আত্মার অনুভবে। প্রমাণ বুদ্ধির ভাষা, অনুভব হৃদয়ের।'

রাফি বিদ্রূপের সুরে বলল, 'তাহলে বিজ্ঞান-দর্শন সবই বৃথা?'

স্যার মৃদু হেসে বললেন, 'না রাফি, বিজ্ঞান পথ দেখায়, আল্লাহর দিকে নিয়ে যায় না। পথ জানা আর পথিক হওয়া এক নয়।'

রাফির বুকের ভেতরটা তখন কেঁপে উঠল। বিজ্ঞান সব জানায়, কিন্তু শান্তি দেয় না। সে বুঝল, জ্ঞান বলে 'কীভাবে', বিশ্বাস বলে 'কেন'।

সেদিন রাতে ডায়রিতে লিখল রাফি—'মহাবিশ্বের নিয়ম আমি হয়তো জেনেছি, কিন্তু হারিয়েছি তার মালিককে।'

ছুটিতে রাফি গেল গ্রামের বাড়িতে। গ্রামটা ছোট, কিন্তু তাতে বুকভরা শান্তি। সেখানে এক বৃদ্ধ সুফির দেখা পেল—হজরত আবদুল কাদির সাহেব। টিনের চায়ের দোকানের পাশে দরিদ্র মানুষদের খাওয়ান তিনি, নিজে খান শুধু এক গ্লাস পানি।

রাফি বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল, 'হুজুর, আপনি দেন শুধু, নেন না কেন?'

বৃদ্ধ হেসে বললেন, 'বাবা, যে নেয় সে দুনিয়া ভরে, যে দেয় সে আখিরাত ভরে। আমি বেছে নিয়েছি দ্বিতীয়টা।'

রাফি তাকিয়ে রইল তাঁর চোখের দিকে। সেখানে এক অদ্ভুত আলো—জ্ঞানের নয়, প্রশান্তির। সেই রাতে মসজিদের উঠোনে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাফি ভাবল, এই বৃদ্ধ মানুষটাই যেন আল্লাহর জীবন্ত প্রমাণ।

বিকেলের সূর্য অস্ত যাচ্ছে। গ্রামের প্রাথমিক মাদ্রাসার সামনে বাচ্চারা হেসে হেসে পড়ছে—'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম…' রাফির চোখ পড়ল এক তরুণীর দিকে—মুখে নরম হাসি, হাতে কিতাব, চোখে আকাশের শান্তি।

সে-ই লায়লা। মাদ্রাসার শিক্ষিকা, বয়স পঁচিশের কাছাকাছি। লায়লার চোখে এক আধ্যাত্মিক কোমলতা। রাফি বুঝল, ওই চোখে শুধু জ্ঞান নয়, গভীর ঈমানের দীপ্তি।

কয়েকদিন পর সাহস করে কথা বলল লায়লার সঙ্গে। লায়লা হেসে বলল, 'আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অনেক বই পড়েছেন নিশ্চয়।'

রাফি বলল, 'হ্যাঁ, কিন্তু এখন মনে হয়, বই সত্য জানে, কিন্তু বোঝে না। আমি এমন কিছু খুঁজছি যা শুধু মস্তিষ্কে নয়—হৃদয়ে পৌঁছায়।'

লায়লা মৃদু হাসল, 'তাহলে আপনি আল্লাহর পথেই আছেন। তিনি এমনভাবে ডাকেন, মানুষ ভাবে আমি খুঁজছি, অথচ তিনিই তো খুঁজে নিচ্ছেন।'

সেই মুহূর্তে রাফি বুঝল, এই মেয়েটির কথার গভীরে এমন কিছু আছে যা তাকে বদলে দিতে পারে।

এক রাতে লায়লা নিয়ে গেল গ্রামের খানকায়। মৃদু আলো, ধূপের ঘ্রাণ, তসবিহ হাতে একদল মানুষ নিঃশব্দে জিকির করছে—'আল্লাহ… আল্লাহ… আল্লাহ…'

প্রথমে রাফির মনে হল, এটা কেবল সমষ্টিগত ধ্যান। কিন্তু ধীরে ধীরে শব্দগুলো যখন তার ভেতরে ঢুকল, সে কিছু ভিন্ন অনুভব করল। মনে হল, প্রতি 'আল্লাহ' উচ্চারণের সঙ্গে তার ভেতরের কিছু একটা গলে যাচ্ছে—হয়তো অহংকার, হয়তো ভয়।

লায়লা পাশে বসে চোখ বুজে। ঠোঁট নড়ছে, কিন্তু শব্দ নেই। রাফি দেখল, তার মুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। সেই মুহূর্তে রাফির চোখে পানি চলে এল।

বুকের ভেতর থেকে যেন কেউ বলল, 'তুমি প্রমাণে আমাকে খুঁজছিলে, আমি তো তোমার হৃদয়ের ভিতরেই আছি।'

রাফি মাটিতে সেজদায় পড়ে গেল। এই সেজদা ছিল নিয়মের নয়, ছিল উপলব্ধির।

সকালে বৃদ্ধ সুফি আবদুল কাদির সাহেব এসে বললেন, 'বাবা রাফি, তুমি যে কান্না করেছ, সেটাই প্রথম দরজা। কান্না দুর্বলতা নয়, হৃদয়ের শুদ্ধি।'

রাফি বলল, 'আমি বুঝতে পারছি হুজুর, আমার জ্ঞান অহংকারে ঢাকা ছিল। এখন মনে হচ্ছে, মানুষ আল্লাহকে না জেনে হারায় না, নিজেকে বেশি জেনে হারায়।'

হুজুর হেসে বললেন, 'ঠিক তাই, সন্তান। নিজেকে ছোট মনে করলেই মহানকে পাওয়া যায়।'

সেদিন থেকে রাফি ভোরে নামাজ পড়ে, কিছুক্ষণ নীরবে বসে থাকে। সে অনুভব করে, পাখির ডাক, বাতাসের ছোঁয়া, সূর্যের আলো—সবেতেই আল্লাহর দয়া প্রবাহিত হচ্ছে।

লায়লা একদিন বলল, 'রাফি, তুমি বদলে গেছ। তোমার চোখে এখন যুক্তি দেখি না, দেখি প্রেম।'

রাফি মৃদু হাসল, 'আমি আর তাঁকে প্রমাণ করতে চাই না, শুধু অনুভব করতে চাই।'

দিনগুলো শান্তিতে কাটছিল। রাফি এখন ফজরের নামাজের পর খানকার পাশে বসে জিকির করে। লায়লা কখনো পাশে বসে, কখনো দূর থেকে দেখে—তার চোখে প্রশান্তির সাগর।

একদিন লায়লা বলল, 'রাফি, ভালোবাসা মানে শুধু পাওয়া নয়, কাউকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেওয়া।'

রাফি বিস্ময়ে তাকাল, 'তুমি তাহলে ভালোবাসো না?'

লায়লা মৃদু হাসল, 'ভালোবাসি, কিন্তু আল্লাহর জন্য। তুমি আমার নও, তাঁর। আমিও তোমার জন্য নই, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য।'

রাফির মনে হল, পৃথিবীর সব প্রেম এখানে এসে থমকে দাঁড়াল। এই প্রেমে আকাঙ্ক্ষা নেই, দখল নেই—কেবল মুক্তি।

রাতে ডায়রিতে লিখল—'লায়লা আমার নয়, তবু সে-ই আমাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। ভালোবাসা মানে কাউকে পাওয়া নয়, কারও মাধ্যমে আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া।'

কিন্তু প্রেমের পথে পরীক্ষা থাকবেই। লায়লার বাবা অসুস্থ, তাকে ঢাকায় ফিরতে হল। ঢাকায় লায়লার বাড়ি, বিদায়ের সময় লায়লা বলল, 'রাফি, আমার জন্য দোয়া করো। আমরা আবার দেখা পাব কিনা জানি না, কিন্তু আল্লাহ চাইলে তাঁর সান्नিধ্যেই দেখা হবে।'

রাফির বুক হিম হয়ে গেল। অনেক কিছু বলতে চাইল, কিন্তু মুখ দিয়ে বেরোল শুধু—'আল্লাহ তোমার সহায় হোন।'

লায়লা চলে গেল। গ্রাম থেকে শহরের পথে ধুলোর মতো মিলিয়ে গেল তার সাদা ওড়না।

রাফি রাত পর্যন্ত মসজিদের বারান্দায় বসে রইল। বৃদ্ধ সুফি এসে বললেন, 'তুমি যার জন্য কাঁদছ, তাকে আল্লাহ শেখানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন—ভালোবাসা মানে কী।'

রাফি কিছু না বলে চোখ মুছে সেজদায় পড়ে গেল। এই সেজদা ছিল নতুন আত্মসমর্পণের সূচনা।

মাস পেরিয়ে গেল। লায়লার কোনো খবর নেই, তবু রাফির মনে শান্তি। সে বুঝে গেছে—ভালোবাসার পরিণতি ত্যাগ, আর ত্যাগের পরিণতি আল্লাহর নৈকট্য।

রাফি এখন খানকা পরিষ্কার করে, জিকির করে, বাচ্চাদের কুরআন শেখায়। তার মুখে এক প্রশান্তি—যা দিতে পারে শুধু আল্লাহর সান্নিধ্য।

একদিন ভোরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, 'হে প্রভু, তুমি আমার হৃদয় ভেঙে আমাকে তোমার কাছে এনেছ। লায়লার মুখে আমি তোমার কণ্ঠ শুনেছি, তার চোখে তোমার দয়া দেখেছি।'

বুকের ভেতর এক আলো জ্বলে উঠল—এ আলো বুদ্ধির নয়, আত্মার।

সে বুঝল, জীবনের সব সম্পর্ক, সব আনন্দ, সব দুঃখ—সবই এক উদ্দেশ্যে: সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে যাওয়া।

দীর্ঘ ছয় মাস পর রাফি ফিরল ঢাকায়। একসময় যে শহর অস্থিরতার প্রতীক, আজ তা অন্যরকম মনে হয়। ভিড়, যানজট, চিৎকার—সবই এখন অদ্ভুত ছন্দময়, আল্লাহর সৃষ্ট জগতের কোলাহলও যেন এক প্রার্থনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অধ্যাপক সাদিক স্যারের সঙ্গে দেখা। স্যার অবাক হয়ে বললেন, 'তুমি বদলে গেছ রাফি। তোমার চোখে এখন তর্ক দেখি না, দেখি আলো।'

রাফি মৃদু হাসল, 'স্যার, আমি এখন বুঝি—জ্ঞান মানে সবকিছু জানা নয়, নিজের অজানাকে চিনে নেওয়া।'

স্যার মাথা নেড়ে বললেন, 'তুমি এখন প্রকৃত দার্শনিক হয়েছ। কিন্তু মনে রেখো, আত্ম-উপলব্ধি তখনই পূর্ণ হয়, যখন তা অন্যদের উপকারে আসে।'

রাফির ভেতরে নতুন চিন্তার জন্ম নিল।

রাফি এখন সন্ধ্যায় শহরের গরিব শিশুদের পড়ায়। কেউ রিকশাচালকের সন্তান, কেউ ফুল বিক্রেতার। তাদের চোখে সে খুঁজে পায় সেই আলো, যা একদিন লায়লার চোখে দেখেছিল।

একদিন এক শিশু জিজ্ঞেস করল, 'ভাইয়া, আপনি এত কিছু জানেন, তবু আমাদের সঙ্গে বসে পড়ান কেন?'

রাফি হাসল, 'কারণ তোমাদের মুখে হাসি দেখলে আমি আল্লাহকে দেখি।'

শিশুটি কিছু বুঝল না, কিন্তু তার হাসিতে রাফির চোখে জল এসে গেল।

রাতে ডায়রিতে লিখল—'আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া মানে কেবল সেজদায় নয়, মানুষের কষ্ট লাঘবের কাজেও। সেবাই হলো নীরব দোয়া।'

একদিন রাফি খানকায় ফিরে গেল বৃদ্ধ সুফির কাছে। হুজুর বারান্দায় বসে তসবিহ ঘোরাচ্ছেন।

রাফি বলল, 'হুজুর, আমি এখন বুঝি—আল্লাহর প্রেম শুধু ধ্যান নয়, কর্মও। মানুষের সেবা করলেই তাঁর সান্নিধ্য পাওয়া যায়।'

বৃদ্ধ মৃদু হাসলেন, 'ঠিক ধরেছ, রাফি। যখন তুমি ক্ষুধার্তকে খাওয়াও, তখন শুধু তার পেট ভরাও না—আল্লাহর প্রেমের রূপ দেখাও। এটাই প্রকৃত তাওহিদ, যেখানে সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি আলাদা নয়, একে অপরের মধ্যে প্রকাশিত।'

রাফি মাথা নত করল। চোখে অশ্রু, কিন্তু তা আনন্দের।

সেদিন রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকাল। তারার ঝিকিমিকি আলোয় এক উষ্ণতা অনুভব করল—মনে হল, প্রতিটি তারাই বলছে—'তুমি একা নও, তোমার প্রভু তোমার সঙ্গে আছেন।'

রাফির জীবন যেন ঠিক পথে চলছিল। শিক্ষার্থীরা তাকে ভালোবাসে, অধ্যাপকরা প্রশংসা করে, হৃদয় এখন স্থির, প্রশান্ত।

হঠাৎ একদিন খবর এল—লায়লা অসুস্থ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, অবস্থা গুরুতর।

রাফি ছুটে গেল। লায়লা নিস্তেজ, চোখ বন্ধ, বুকের ওপর অক্সিজেন টিউব। মুখে সেই শান্তি, কিন্তু রাফির বুকের ভেতর যেন ছুরি চালাল।

ফিসফিস করে বলল, 'লায়লা, তুমি আমাকে শেখালে কীভাবে আল্লাহকে খুঁজতে হয়। এখন তুমি চলে গেলে, আমি কাঁদব?'

লায়লা কষ্টে চোখ খুলল। ঠোঁটে ক্ষীণ হাসি—'রাফি, তুমি এখনও আমাকে খুঁজছ আমার মধ্যে? আল্লাহকে খুঁজে নিতে হয় মানুষের সীমার বাইরে।'

তার কণ্ঠ কাঁপছিল, কিন্তু শব্দগুলো আয়াতের মতো বাজছিল। 'আমি চলে গেলে কাঁদবে না, কারণ আমি হারাব না—আমি চলে যাব সেই জায়গায়, যেখানে প্রতিটি আত্মা সৃষ্টিকর্তার সামনে দাঁড়ায়।'

রাফি তার হাত ধরে কাঁদল।

লায়লা চলে গেল। সাধারণ জানাজার নামাজ, কিছু কান্না, কিছু নিস্তব্ধতা। রাফির পৃথিবী যেন থেমে গেল।

রাতভর মসজিদের মেঝেতে বসে রইল। নামাজ শেষে বলল, 'হে প্রভু, আমি তোমার প্রেমে শান্তি খুঁজেছি, কিন্তু আজ তুমি শিখালে—প্রেম মানে শুধু পাওয়া নয়, হারানোও।'

চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াল, কিন্তু তাতে হতাশা নেই—আত্মসমর্পণ আছে।

বৃদ্ধ সুফি এসে পাশে বসলেন। বললেন, 'রাফি, তুমি এখন সত্যিকারের প্রেমিক হয়েছ। কারণ প্রকৃত প্রেমিক প্রিয়জন হারিয়ে কাঁদে না, প্রভুর সিদ্ধান্তে সেজদা করে।'

রাফি সেজদায় পড়ে গেল। কপাল ঠেকল ঠাণ্ডা মেঝেতে, ঠোঁট থেকে বেরোল নীরব দোয়া—'হে আল্লাহ, লায়লাকে তুমি নিজের কাছে রেখো। আমি আর তোমার পরিকল্পনা বুঝতে চাই না, শুধু চাই, প্রতিটি কষ্টে তোমার রহমত চিনতে পারি।'

মাস কেটে গেল। রাফি এখন আগের চেয়েও শান্ত, পরিণত। শেখায়, সেবা করে, মানুষের মাঝে হাসি বিলায়। ভিতরে অবিনশ্বর আলো—লায়লার শেখানো আল্লাহ-চেতনার দীপ্তি।

একদিন এক ছাত্র জিজ্ঞেস করল, 'স্যার, আপনি সব সময় শান্ত থাকেন কীভাবে?'

রাফি মৃদু হাসল, 'কারণ আমি এখন জানি, যা ঘটে, সবই তাঁর ইচ্ছায়। প্রতিটি দুঃখ, প্রতিটি মৃত্যু, প্রতিটি মিলন—সবই আল্লাহর লেখা এক কবিতা।'

রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করল, 'লায়লা, তুমি হারাওনি। তুমি এখন প্রতিটি তারায়, শিশুর হাসিতে, দোয়ার শব্দে।'

সে সেজদায় গেল, চোখ বুজল। ভেতর থেকে ভেসে এল প্রাচীন কণ্ঠ—'তুমি অবশেষে আমায় খুঁজে পেয়েছ, রাফি। আমি তো শুরু থেকেই তোমার সঙ্গে ছিলাম।'

আলো ভরে গেল ঘর। রাফির মুখে প্রশান্তির ছায়া। ধীরে বলল—'হে প্রভু, আমি বুঝেছি—তুমি আছ প্রতিটি নিশ্বাসে, প্রতিটি কণায়, প্রতিটি ভালোবাসায়।'

রাফির জীবন এখন চলমান প্রার্থনা। সে বড় বক্তৃতা দেয় না, বড় বই লেখে না—শুধু মানুষের পাশে দাঁড়ায়, হাসি বিলায়, আর নীরবে বলে—'আমি তাঁকে খুঁজেছি, আর তিনি আমায় খুঁজে পেয়েছেন।'

এই কথাগুলোই তার জীবনের সারসংক্ষেপ—'জীবন মানে সৃষ্টিকর্তার দিকে ফিরে যাওয়া, আর প্রত্যেক ভালোবাসা মানে সেই পথের একেকটি পদক্ষেপ।'

'যে নিজেকে হারায়, সে-ই সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পায়।'

সমাপ্ত


Leave Your Comments




সাহিত্য এর আরও খবর