প্রকাশিত :  ১৮:৩২
০৫ অক্টোবর ২০২৫

৫ ব্যাংকের আমানতকারীরা কবে পাবেন টাকা? কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানাল নির্দিষ্ট সময়সূচি

✍️ নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা, ৬ অক্টোবর ২০২৫ – দেশের পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক প্রাইভেট ব্যাংকের গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন। খেলাপি ঋণের জটিলতায় এই ব্যাংকগুলো চরম সংকটে পড়েছে, যার ফলে তারা গ্রাহকদের দায়িত্ব যথাযথভাবে সামলাতে পারছে না। এখন এই পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংকে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে এবং এটি আগামী নভেম্বর থেকে পূর্ণোদ্যমে কার্যকর হবে। একীভূত ব্যাংকগুলো হলো – ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও এক্সিম ব্যাংক।

গ্রাহকদের যন্ত্রণা: টাকা তুলতে গিয়ে শাখা থেকে শাখায় ঘুরতে হচ্ছে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার পর থেকেই গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো – “আমাদের টাকা কবে ফেরত পাব?” বর্তমানে ব্যাংকে গেলে গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, “পরে আসুন।”

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোতালেব হোসেন বলেন, “জরুরি চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার, কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও মাত্র ১০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি।”

এক অন্য গ্রাহক জানান, “দুই মাস ধরে এক লাখ টাকার চেক হাতে নিয়ে ঘুরছি, কিন্তু শাখায় কোনো টাকা নেই।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি: ‘সব টাকা সুরক্ষিত, চিন্তা নেই’

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মার্জার প্রক্রিয়া শেষ হলে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছেন,

“ছোট আমানতকারীদের প্রথমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। পাঁচটি ব্যাংকের সব গ্রাহকের আমানত সম্পূর্ণ সুরক্ষিত। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর গ্যারান্টি দিয়েছে। আমরা শুধুমাত্র গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্যই এই সব পদক্ষেপ নিয়েছি।”

সংকটের মূল কারণ: খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড়

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচটি ব্যাংকের ঋণের ৪৮% থেকে ৯৭% খেলাপি। ফলে তারা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

গ্রাহক সংখ্যা: ৯২ লাখেরও বেশি,

আমানতের পরিমাণ: ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা,

বিতরণকৃত ঋণ: ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা,

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়া: ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা ফেরত দেওয়া যায়নি।

অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, যদি মার্জার সফলভাবে না হয়, তাহলে পুরো ব্যাংকিং খাতে আস্থার সংকট আরও গভীর হবে। সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেছেন,

“মার্জার সফল না হলে গোটা ব্যাংকিং সিস্টেমে বিশ্বাসের ঘাটতি বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত গ্রাহকদের টাকা ফেরতের জন্য স্পষ্ট টাইমলাইন দেওয়া।”

ব্যাংক কর্তাদের আশা

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন,

“এক কোটি গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই মার্জার করা হচ্ছে। আশা করি, এর পর গ্রাহকদের সব দুশ্চিন্তা দূর হবে।”

এক নজরে-

পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হয়ে হচ্ছে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক,

কার্যকর হবে নভেম্বর ২০২৫ থেকে,

ছোট গ্রাহকদের টাকা আগে ফেরত দেওয়া হবে,

সব আমানত সুরক্ষিত, সরকারের গ্যারান্টি রয়েছে।

যদি এই মার্জার সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে দেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরে আসবে এবং লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের দীর্ঘদিনের উদ্বেগও কমে যাবে।


Leave Your Comments




ব্যাংক-বীমা এর আরও খবর