প্রকাশিত :  ১৫:৫৯
০৩ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৫০
০৩ অক্টোবর ২০২৫

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের নতুন যুগ: ‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’ প্রকল্পে শেয়ারবাজারে বিপ্লবের হাওয়া

✍️ নিজস্ব প্রতিবেদক

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের নতুন যুগ: ‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’ প্রকল্পে শেয়ারবাজারে বিপ্লবের হাওয়া

ঢাকার হৃদয়ে, তেজগাঁওয়ের ধূলিময় শিল্পাঞ্চলে জন্ম নিল এক নতুন স্বপ্ন। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, যা দীর্ঘদিন ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে পরিচিত, এখন রিয়েল এস্টেটে প্রবেশ করছে একটি মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে। ‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’—দেশের প্রথম হাইটেক স্কাইস্ক্র্যাপার—শুধু ঢাকার আকাশরেখা বদলাবে না, এটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও সোনার খনি হয়ে উঠতে পারে। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রকল্পটির ফলে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের শেয়ারের দাম আগামী কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। আসুন দেখি, কেন এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে।

ঢাকার আকাশরেখা বদলাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে রাজধানীর বাণিজ্যিক মানচিত্র। দীর্ঘদিন শুধুমাত্র শিল্পকারখানার জন্য পরিচিত তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এখন দাঁড়িয়েছে এক যুগান্তকারী প্রকল্পের প্রান্তে। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড এবং হেডরুম গ্রুপ যৌথভাবে হাতে নিয়েছে দেশের প্রথম হাইটেক স্কাইস্ক্র্যাপার নির্মাণের মহাপরিকল্পনা—‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’। এটি কেবল বহুতল ভবন নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ও জীবনযাত্রার কেন্দ্র, যা বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান CCFED নির্মাণকাজের দায়িত্ব নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার একাধিক আন্তর্জাতিক মানের মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’ কেবল স্বপ্ন নয়, বরং দৃঢ় বাস্তবতার পথে এগোচ্ছে। প্রকল্পটি ২০ কাঠা জমির উপর ৩২-তলা ভবন হিসেবে গড়ে উঠবে, যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ফাইলিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রকল্পটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এর বহুমুখী নকশা। এখানে কেবল কর্পোরেট অফিস নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক, বিনোদন ও জীবনযাত্রার কেন্দ্র (হাব) তৈরি হবে। ভবনের ভেতরে থাকছে:

অত্যাধুনিক লাক্সারি অফিস স্পেস, যা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণ করবে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়, যা ফিনান্সিয়াল সেক্টরকে এক ছাদের নিচে নিয়ে আসবে।

আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা চেইন হোটেল, যা টুরিজম ও বিজনেস ট্রাভেলারদের জন্য আদর্শ।

সর্বাধুনিক বিজনেস সেন্টার, যেখানে কনফারেন্স, মিটিং ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।

অভিজাত রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে জোন, যা শহরের সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে।

সুইমিং পুল ও ফিটনেস সেন্টার, যা কর্মচারীদের ওয়েলবিয়িং নিশ্চিত করবে।

জরুরি অবস্থায় ২৪/৭ চিকিৎসা সেবা, যা সেফটি স্ট্যান্ডার্ড উন্নত করবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের মতে, ‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’ হবে এমন একটি বহুমাত্রিক কমপ্লেক্স, যেখানে ব্যবসা, প্রযুক্তি ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রা একসাথে মিলিত হবে। এটি দেশের প্রথম হাইটেক বিল্ডিং, যেখানে নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা অনন্য। পুরো ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালিত হবে মোবাইল অ্যাপ-ভিত্তিক স্মার্ট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে। ভবনের ভেতরে প্রবেশ, লিফট ব্যবহার, অফিসে প্রবেশাধিকার কিংবা পার্কিং—সবকিছু ডিজিটাল সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এই প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা স্থাপত্যশৈলী ও ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা দুইই উন্নত করবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার বাণিজ্যিক পরিবেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য আরও আগ্রহী হবেন। কারণ এখানে একসাথে অফিস স্পেস, হোটেল, ব্যাংকিং সুবিধা ও বিনোদনের সুযোগ মিলবে। এটি বাংলাদেশকে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র (হাব) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।

কেন এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের দাম বাড়বে? বিশ্লেষণ:

 ১. ডাইভার্সিফিকেশন স্ট্র্যাটেজি: এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ঐতিহ্যগতভাবে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে নির্ভরশীল। ‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে কোম্পানি রিয়েল এস্টেটে প্রবেশ করছে, যা অ্যাসেট বেসকে শক্তিশালী করবে এবং নতুন আয়ের ধারা (রেভিনিউ স্ট্রিম) তৈরি করবে।

 ২. বাজার ক্যাপিটালাইজেশন ও ভ্যালুয়েশন বৃদ্ধি: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫ অনুযায়ী, শেয়ারের দাম ৫৯.৫০ টাকা, মার্কেট ক্যাপ ৭,৪৯০.৪৭৯ মিলিয়ন টাকা। শেয়ারটির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বাজার প্রতিক্রিয়া সামান্য নেতিবাচক হলেও, দীর্ঘমেয়াদে প্রকল্পটি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) প্রায় দ্বিগুণ হবে, যা শেয়ারের দাম বাড়াতে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করবে।

 ৩. বিদেশি বিনিয়োগ ও আস্থা বৃদ্ধি: রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বুমের প্রভাবে, প্রকল্প ঢাকাকে সিঙ্গাপুর বা দুবাইয়ের মতো হাবে পরিণত করবে। ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের অংশ বৃদ্ধি পাবে, যা শেয়ারের দাম বাড়াবে।

 ৪. কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রভাব: প্রকল্পটি সরাসরি ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করবে। তেজগাঁওকে কর্পোরেট হাবে রূপান্তর করবে, জমির মূল্য বাড়াবে এবং আশপাশের অর্থনীতিকে উন্নত করবে।

 ৫. মার্কেট সেন্টিমেন্ট ও প্রজেকশন: ডিএসইতে ইতিমধ্যেই শেয়ারের দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, প্রকল্পের অগ্রগতির সঙ্গে শেয়ারের দাম  অভাবনীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পেতে পারে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ধীরে ধীরে কর্পোরেট হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। নতুন বিনিয়োগ, জমির মূল্য বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন ঘটবে, যা পরোক্ষভাবে শেয়ারের দামকে সমর্থন করবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় স্থপতি, প্রকৌশলী, নির্মাণ শ্রমিক, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় তরুণরা আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশে কাজ করার মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াবে। এটি কোম্পানির সামাজিক প্রভাব (ESG) বাড়াবে এবং শেয়ারের দামকে সমর্থন করবে।

‘টাইমস স্কয়ার, ঢাকা’ কেবল একটি ভবন নয়, এটি আধুনিক বাংলাদেশের প্রতীক। ব্যবসা, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার সমন্বয় এ প্রকল্পকে দেশের অর্থনীতির এক নতুন ধাপ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সময় উপযুক্ত—এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের শেয়ার এখনই কেনা যেতে পারে। তবে বাজারের ঝুঁকি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি শুধু সংবাদ নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নের উজ্জ্বল অধ্যায়।


Leave Your Comments




পুঁজি বাজার এর আরও খবর