প্রকাশিত : ১৩:৫০
০৩ অক্টোবর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:২৬
০৩ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইনস্যুরেন্স খাত নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারায় ভাসমান ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তবতা। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-তে তালিকাভুক্ত প্রায় ৩০টি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার বর্তমান দামের থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধির পথে রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৫ সালে এই খাতের মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ (গ্রস রাইটেন প্রিমিয়াম) ১৫.৫৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নির্দেশ করছে। এই প্রতিবেদনে খাতের বর্তমান অবস্থা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ইনস্যুরেন্স খাতের বর্তমান চিত্র: উদীয়মান শক্তি
বাংলাদেশের ইনস্যুরেন্স খাত দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করছে। ২০২৪ সালে খাতটির প্রিমিয়াম সংগ্রহের বৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশে নেমে আসে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে এই হ্রাস সত্ত্বেও, খাতটি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে।
ডিএসই-তে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্রণী ইনস্যুরেন্স (AGRANINS) অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শেয়ারের দাম বর্তমানে ২৬.৯০ টাকা, যা কয়েক মাসে ১.৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এশিয়া ইনস্যুরেন্স (ASIAINS) ২৭.৯০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে, যা ২.২০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছে।
লাইফ ও নন-লাইফ উভয় ধরনের কোম্পানি এখানে তালিকাভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স (DELTALIFE) ৮১.০০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে, যা ১.২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফারইস্ট লাইফ (FAREASTLIF) ২৮.১০ টাকা, যা ৪.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছে। মোট ৩০টির মতো শেয়ার এই খাতের বৈচিত্র্য নির্দেশ করছে।
২০২৪ সালে ক্লেইম সেটেলমেন্ট রেট লাইফ ইনস্যুরেন্সে ৩৪ শতাংশ এবং নন-লাইফে ১০ শতাংশ। এটি একটি চ্যালেঞ্জ, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কারের মাধ্যমে খাতের কার্যকারিতা উন্নত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের 'বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স খাত উন্নয়ন প্রকল্প' ২০২৫ সালে বাজারের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি: কেন শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হবে?
২০২৫ সালে খাতের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। সিম্পলি ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করছেন, কারণ দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল।
স্বাস্থ্য বীমা (হেলথ ইনস্যুরেন্স) বাজার ২০২৫ সালে ১১২.৯৩ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
সাধারণ বীমা (জেনারেল ইনস্যুরেন্স) বাজার ২০২৫-২০৩১ সালে বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে ৮০০ মিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। CAGR ৮.৮ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি:
১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: জিডিপি বৃদ্ধি, মধ্যবিত্তের উত্থান ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে জীবন বীমার চাহিদা বাড়ছে।
২. ডিজিটালাইজেশন: ক্ষুদ্র বীমা (মাইক্রো-ইনস্যুরেন্স) পণ্যের উত্থান নিম্ন আয়ের মানুষকে আকর্ষণ করছে।
৩. নিয়ন্ত্রক সংস্কার: ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (IDRA) প্রতিযোগিতা ও আর্থিক সচেতনতা বাড়াচ্ছে।
৪. আন্তর্জাতিক মান গ্রহণ: বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো গ্রহণের মাধ্যমে ক্লেইম সেটেলমেন্ট উন্নত হচ্ছে।
এই সব কারণের সমন্বয়ে ৩০টি শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ:
সিটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স (CITYGENINS): ৬৯.১০ টাকা, ২.৩৭% বৃদ্ধি।
ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স (CRYSTALINS): ৫৬.৪০ টাকা, ৩.৮৭% বৃদ্ধি।
কোম্পানির নির্দিষ্ট বিশ্লেষণ: বিনিয়োগের সম্ভাবনা
ডিএসই-তে তালিকাভুক্ত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি:
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স (BNICL): ৪৩.৪০ টাকা, মার্কেট ক্যাপ ১.৯২ বিলিয়ন, ২.১২% বৃদ্ধি।
সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স (CENTRALINS): ৪০.৬০ টাকা, ১.০০% বৃদ্ধি।
ইসলামী ইনস্যুরেন্স (ISLAMIINS): ৩৯.০০ টাকা।
মেঘনা লাইফ (MEGHNALIFE): ৬২.৬০ টাকা।
পদ্মা লাইফ (PADMALIFE): ২০.২০ টাকা, কম দামের কারণে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।
গ্লোবাল ডেটার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালে খাতের মূল কার্যকারিতার সূচকগুলো উন্নতি করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “বাংলাদেশের জীবন বীমা খাত সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ পাবে।”
ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ: সতর্কতা জরুরি
সবকিছুই সুবর্ণ নয়। ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি কম ছিল, কিছু আর্থিক অনিয়মও দেখা গেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি এবং খাত-নির্দিষ্ট সমস্যা বিদ্যমান। তবে বেসরকারি খাতের ডায়াগনস্টিক অনুযায়ী, খাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ
সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ইনস্যুরেন্স খাতের সুবর্ণ যুগ শুরু হচ্ছে। ৩০টি শেয়ারের দাম দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা বাস্তবসম্মত, যদি প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি কার্যকর থাকে। বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে, ২০২৫ সাল এই খাতের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।