প্রকাশিত : ১৯:১২
০২ অক্টোবর ২০২৫
সংগ্রাম দত্ত: কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার কদমচাল গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কালনী নদী সাথে ভেড়া মোহনা নদীর সংযোগস্থলে অবৈধ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে হাওরের ভুক্তভোগী ৪টি ইউনিয়নবাসী। এই অবৈধ বাঁধের অপসারণের দাবিতে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছে হাওরের পাঁচ শতাধিক কৃষক। এই বাঁধের ফলে হাওরের বর্ষার পানি দেরিতে নিষ্কাশন হয়। এতে বোরো ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে এবং মিঠাপানির মৎস্য উৎপাদনও কমে গেছে।
এই অবৈধ বাঁধ অপসারণের দাবিতে হবিগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এডহক কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবির বলেন, হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলাধীন ১৪নং মুরাদপুর ইউপি, ১৫ নং পৈলারকান্দি ইউপি, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউপি, মিঠামইন উপজেলার ৭নং বৈরাটি ইউপির জনগণ আবহমানকাল যাবৎ নদীর পূর্ব দিকের অংশটি অবাধ নৌ চলাচল, কৃষি পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে আসছিল। বর্তমানে এই অবৈধ বাঁধ কারণে কৃষি জমিতে বোরো মৌসুমে সেচের জন্য ভেড়া মোহনা নদী ও বছিরা নদীতে পানি না থাকার কারণে সেচ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। অষ্টগ্রাম উপজেলার কদমচাল এলাকার কতিপয় অসাধু ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে বাঁধ নির্মাণ করে ৪টি ইউনিয়নের লক্ষ লক্ষ মানুষের অধিকার হরণ করেছে এবং হাওরের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে দিয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য সচিব চৌধুরী ফরহাদ এ ব্যাপারে বলেন, কালনী নদী ও ভেড়া মোহনা নদীর সংযোগস্থলে বাঁধ নির্মাণের কারণে ভেড়া মোহনা ও বছিরা নদীকে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের কোটি-কোটি টাকা মূল্যের জলমহাল গুলো প্রায় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে ইজারাদার ও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই বাঁধের কারণে দুইটি নদীর সাথে সংযুক্ত সকল খাল-বিল ধ্বংসের কবলে পতিত হয়েছে। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে স্রোতের প্রবাহ বন্ধ হওয়ার ফলে কৃষি জমিতে আগাছা জন্মে হাজার হাজার একর ফসলী জমি চাষবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বে ভুক্তভোগী জনগণের পক্ষে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ দাখিলের প্রেক্ষিতে সরজমিনে তদন্তপূর্বক এই বাঁধ অপসারণের জন্য হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বানিয়াচং উপজেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ একরামুল হক বিগত ১৮ জুলাই ২০২৪ একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে বাঁধটি অপসারণ করতে গেলে কদমচাল গ্রামের অবৈধ স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহল জোরপূর্বক বাধা প্রদান করে আসছে। এব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
বাঁধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা ফুঁসে উঠেছে। জীবন ও জীবিকা ধ্বংসকারী এই বাঁধটি অতিসত্বর অপসারণ করা না হলে হাওরের ৪টি ইউনিয়নের বিক্ষুব্ধ জনতা গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।