প্রকাশিত : ০৮:০৩
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✍️ ড. নাজমুল ইসলাম
একুশে বইমেলা—শুধু বই কেনা-বেচার জায়গা নয়, এটি যেন আমাদের আত্মার এক বড় উৎসব। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হওয়া এই মেলায় প্রতি বছরই আমরা পাই অনেক নতুন লেখা। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আছে দারুণ এক খবর: জনপ্রিয় লেখক ও সফল উদ্যোক্তা রেজুয়ান আহম্মেদের বহুল প্রতীক্ষিত উপন্যাস ‘আলোকছায়া’ আসছে অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে।
এই উপন্যাস পড়লে পাঠকের মন ভরে উঠবে এক ভিন্ন স্বাদে, মিলবে নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা। কারণ, এটি স্রেফ কোনো গল্প নয়; এর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে সংগ্রামের পর সফলতা পাওয়ার দারুণ এক জীবনদর্শন। লেখক খুব কাছ থেকে দেখা নিজের অভিজ্ঞতা আর গভীর ভাবনার মিশেলে বুনেছেন এই হৃদয়ছোঁয়া আখ্যান।
‘আলোকছায়া’-তে রেজুয়ান আহম্মেদ দেখিয়েছেন—যখন জীবন নানা ধাক্কায় এলোমেলো হয়ে যায়, যখন চারপাশের অন্ধকার আমাদের গ্রাস করতে চায়, তখনও মানুষ নিজেকে নতুন করে খুঁজে নিতে পারে। এই আত্ম-অনুসন্ধানের পথ ধরেই আমরা আমাদের ভেতরের লুকিয়ে থাকা শক্তিকে জাগিয়ে তুলি। উপন্যাসের এই ভাবনাটি কেবল গল্পের চরিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রতিটি পাঠকের মনে তার নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি তৈরি করবে।
জীবন মানেই আলো আর অন্ধকারের সমীকরণ। যেমন সকালে সূর্যের আলো আসে, তেমনি রাতে নামে আঁধার। আমাদের ভেতরের আনন্দের পাশাপাশি দুঃখও থাকে। কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো—আমরা কাকে বেছে নেব? রেজুয়ান আহম্মেদ তাঁর লেখায় পাঠককে এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন।
আমরা চারপাশে প্রায়ই দেখি, অনেকে অলসতা আর হতাশার জালে জড়িয়ে থাকে। হয়তো কোনো কারণে হাল ছেড়ে দিয়েছে বা জীবনের সীমাবদ্ধতা তাদের পথ রুদ্ধ করেছে। অথচ প্রতিটি মানুষের ভেতরেই এক বিশাল সম্ভাবনার আগুন জ্বলছে। দরকার কেবল সেই আগুনটিকে জাগিয়ে তোলা।
‘আলোকছায়া’ ঠিক সেই জাগরণের ডাক দেয়। লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে একজন হাল ছেড়ে দেওয়া মানুষও আবার নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলে, জীবনের স্থবির পথকে সচল করে। বইটি নিঃসন্দেহে পাঠকের মনে নতুন করে বাঁচার সাহস জোগাবে।
রেজুয়ান আহম্মেদকে কেবল লেখক বললে কম বলা হয়—তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর উদ্যোক্তা-জীবনের অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে—ব্যর্থতা মানে শেষ নয়, বরং এটি নতুন করে শুরু করার একটি সিঁড়ি। তাঁর লেখার প্রতিটি ছত্রে এই গভীর দর্শনই ফুটে উঠেছে।
তাঁর লেখার ঢং আলাদা। তিনি বাস্তবতা আর কল্পনার মধ্যে সূক্ষ্ম মেলবন্ধন ঘটান। কখনো বাস্তব জীবনের টুকরো কাহিনি, আবার কখনো স্বপ্নের রঙ—সব মিলিয়ে পাঠককে নিয়ে যান এক অন্য জগতে। তাঁর ভাষা সহজ কিন্তু নিপুণ, ভাবনা গভীর, আর বর্ণনা হৃদয়ছোঁয়া—যা উপন্যাসটিকে এক ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
আজকের তরুণ প্রজন্ম প্রায়শই হতাশায় ভোগে। তীব্র প্রতিযোগিতা, বেকারত্ব বা মানসিক চাপ তাদের জীবনকে কঠিন করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে রেজুয়ান আহম্মেদের ‘আলোকছায়া’ তরুণদের জন্য নতুন আলোর দিশা দেখাবে।
তিনি বোঝাতে চেয়েছেন—অন্ধকার যত গভীরই হোক না কেন, মানুষের মনে সব সময় এক টুকরো আলো থাকে। সেই আলোই পারে আমাদের জাগিয়ে তুলতে, নতুন করে দাঁড় করাতে। তাঁর এই বার্তা অনেক তরুণের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
বাংলা সাহিত্যে বহু উপন্যাস এসেছে, যেখানে মানুষের দুঃখ-সংগ্রাম, প্রেম বা প্রতিবাদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘আলোকছায়া’-র বিশেষত্ব হলো—এখানে সংগ্রামের শেষে যে আলো ফোটে, লেখক সেই আলোই পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন।
এটি কেবল একটি উপন্যাস নয়; বরং জীবনদর্শন শেখার এক পাঠশালা। পাঠক যখন বইটি শেষ করবেন, তখন হয়তো মনে করবেন—এ যেন তাঁরই নিজের গল্প, তাঁর নিজের লড়াইয়ের আখ্যান।
রেজুয়ান আহম্মেদ তাঁর আগের লেখাগুলোর মাধ্যমেই সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে একজন উচ্চমানের লেখক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তাই ‘আলোকছায়া’-কে ঘিরে পাঠকের আগ্রহ ও প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই অনেক।
সবাই চায়, এই বইটি যেন শুধু একটি মেলায় প্রকাশিত বই না হয়ে ওঠে, বরং হোক প্রেরণার এক বাতিঘর। এটি যেন প্রতিটি পাঠকের সংগ্রহে থাকে এবং প্রতিটি মানুষের জীবনে আলো ছড়ায়।
একুশে বইমেলায় রেজুয়ান আহম্মেদের ‘আলোকছায়া’ নিঃসন্দেহে এক অনন্য সংযোজন। আলো-অন্ধকারের টানাপোড়েন, সংগ্রাম আর জেগে ওঠার গল্প পাঠকের হৃদয়ে অবশ্যই আলো জ্বালাবে।
রেজুয়ান আহম্মেদ তাঁর লেখার মাধ্যমে জোর দিয়েই জানিয়েছেন—অন্ধকার থাকলেও আলো সবসময় সম্ভব। প্রতিটি মানুষ যদি নিজের ভেতরের সেই আলো চিনে নিতে পারে, তবে জীবনের যেকোনো ব্যর্থতা পেরিয়ে সফলতার পথে এগিয়ে যাওয়া আর কঠিন নয়।
‘আলোকছায়া’ তাই শুধু একটি বই নয়—এটি এক অনুপ্রেরণা, এক ভরসা, আর এক জীবনদর্শন।