প্রকাশিত :  ১৫:৩৮
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৫:৫৩
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বহুমুখী খাতে প্রবৃদ্ধি, নতুন আস্থায় ফিরছে পুঁজিবাজার!

✍️ নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুমুখী খাতে প্রবৃদ্ধি, নতুন আস্থায় ফিরছে পুঁজিবাজার!

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা ও ওঠানামার পর বিনিয়োগকারীদের মুখে আবারও আশার আলো ফুটতে শুরু করেছে। সপ্তাহের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের সামগ্রিক চিত্র বাজারকে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। সূচক বৃদ্ধি, সক্রিয় লেনদেন, খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বাজারকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে— এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সোমবারের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০.৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ৫৩৪৭.৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা ০.১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। একইসঙ্গে ডিএসইএস সূচক ১.৮১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ১১৫২.০৭ এবং ডিএস৩০ সূচক ০.৬৮ পয়েন্ট বেড়ে ২০৭২.২৫ এ উন্নীত হয়েছে। যদিও সূচকের এ অগ্রগতি সংখ্যায় খুব বড় নয়, তবে তা বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার প্রতীক।

এদিন বাজারে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮৬টি ট্রেড সম্পন্ন হয়েছে। শেয়ার হাতবদলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬৬২ কোটি টাকা, আর লেনদেনের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৬৭৬ কোটি টাকারও বেশি। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাজারের তারল্য বাড়াচ্ছে, যা বাজারের জন্য ইতিবাচক সংকেত।

লেনদেন শেষে দেখা যায়, ২৩৩টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে মাত্র ১০০টির, আর ৬০টির দর অপরিবর্তিত ছিল। অগ্রগতি ও পতনের এ ভারসাম্য বাজারে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আগের তুলনায় আরও সচেতনভাবে বিনিয়োগ করছেন— এটাই মূলত বাজারের ইতিবাচক অবস্থানের অন্যতম কারণ।

বাজার মানচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বীমা, প্রকৌশল, টেক্সটাইল, খাদ্য ও মিশ্র খাতে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।

‘টপ সেক্টর বাই গেইনার’ তালিকায় এসব খাত শীর্ষে রয়েছে।

অন্যদিকে ‘টপ সেক্টর বাই ভ্যালু/ক্যাটাগরি’ তে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস, ব্যাংক এবং প্রকৌশল খাতে।

এ থেকে বোঝা যায়, বিনিয়োগকারীরা কেবল একটি নির্দিষ্ট খাতে সীমাবদ্ধ না থেকে বহুমুখী খাতে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ছে। ধারাবাহিক অগ্রগতি দেখে তারা আরও আশাবাদী হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের নীতিগত পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন—

সূচকের সামান্য বৃদ্ধি হয়তো সংখ্যায় বড় নয়, তবে তা স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্যের প্রতীক।

খাতভিত্তিক অগ্রগতি প্রমাণ করে যে বাজার আর কেবল একটি খাতনির্ভর নয়, বরং বহুমুখী প্রবৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরা স্থায়ী লাভের আশায় বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

লেনদেন শেষে বিনিয়োগকারীদের অভিব্যক্তি স্পষ্ট করেছে— তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। অগ্রগতি ও পতনের ভারসাম্যপূর্ণ অনুপাত, সক্রিয় লেনদেন এবং বহুমুখী খাতে বিনিয়োগের প্রবণতা বাজারের জন্য শুভ লক্ষণ।

আজকের লেনদেন প্রমাণ করেছে— বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার পথে এগোচ্ছে। সূচকের বৃদ্ধি, লেনদেনের পরিমাণ এবং খাতভিত্তিক ইতিবাচক প্রবণতা সবকিছুই বিনিয়োগকারীদের মুখে ফিরিয়ে আনছে আশার আলো।

সামনের দিনগুলোতে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পুঁজিবাজার দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও মজবুত করবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রাখবে— এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।


Leave Your Comments




পুঁজি বাজার এর আরও খবর