প্রকাশিত : ১৯:৫৩
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৫৬
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রেজুয়ান আহম্মেদ
বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক বহুমুখী সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও স্পন্দিত ক্ষেত্র হলো পুঁজিবাজার। প্রতিদিনের ওঠানামা, সূচকের উত্থান বা পতন—সবই যেন এক নাটকের অংশ, যেখানে মূল নায়ক হলো বিনিয়োগকারী, এবং তার হাতে থাকা সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আস্থা।
সূচক নামছে, লেনদেন কমছে, কোনো খাত দুর্বল হয়ে পড়ছে—এসব খবর প্রতিদিন পত্রিকার শিরোনামে আসে। কিন্তু এর আড়ালে থাকে এক অদৃশ্য শক্তি, যা বাজারকে টিকিয়ে রাখে এবং নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। সেটি হলো বিনিয়োগকারীদের অটুট বিশ্বাস।
ইতিহাস সাক্ষী—যখনই বাজার বড় কোনো ধাক্কা খায়, কিছু সময় পর তা আবার নতুন শক্তি নিয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি পতন যেন নতুন করে শেখায়, প্রস্তুত করে এবং একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে। সাময়িক ভয়, আতঙ্ক বা গুজব বাজারকে মুহূর্তের মধ্যে নাড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু স্থিতিশীল আস্থা বাজারকে পুনরুজ্জীবনের পথে টেনে নিয়ে যায়।
ঠিক যেমন ঋতুর চক্রে শীত আসে, গাছের পাতা ঝরে যায়, কিন্তু বসন্তের আগমনে প্রকৃতি আবার সবুজে ভরে ওঠে—পুঁজিবাজারের চক্রও তেমন। ধাক্কা আসে, সূচক নামে, কিন্তু সেটিই পরবর্তী উত্থানের বার্তা বহন করে।
মানুষ যখন শেয়ারে বিনিয়োগ করে, তখন শুধু টাকা ঢেলে না; সঙ্গে ঢেলে আশা, বিশ্বাস এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন। কেউ হয়তো সন্তানের পড়াশোনার জন্য বিনিয়োগ করেন, কেউ অবসরের নিশ্চয়তার জন্য, আবার কেউ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে নিজের অংশীদারিত্বের গর্ব নিয়ে। এই বিশ্বাসই বাজারকে প্রাণ দেয়।
একদিনের দরপতনে যদি আস্থা কেঁপে ওঠে, তবে বাজার হোঁচট খায়। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা যদি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টি রাখেন, তবে সাময়িক পতনকে তাঁরা পথচলার অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন। এই ধৈর্যই একদিন তাদের হাতে ফলপ্রসূ ভবিষ্যৎ এনে দেয়।
পুঁজিবাজারের প্রতিটি খাতেই লুকিয়ে আছে সম্ভাবনা। ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যাংক, বিমা, প্রকৌশল বা টেক্সটাইল—সবখানেই রয়েছে উন্নতির গল্প। কোনো দিন পতন ঘটলেও, পরের দিনই দেখা যায় নতুন সাফল্য।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট—যতক্ষণ বিনিয়োগকারীরা বাজারে আস্থা রাখবেন, ততক্ষণ বাজার কখনোই নিস্তেজ হবে না। কারণ, মূলধন বিনিয়োগের পেছনে যে বিশ্বাস কাজ করে, সেটিই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
আজকের সামান্য নিম্নগতি অনেকের চোখে ভয় আনতে পারে। শিরোনামে আসতে পারে "বাজারে ধস", কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি হতে পারে নতুন সূচনার ইঙ্গিত। বাজার কখনো সরলরেখায় এগোয় না; ওঠানামার মধ্য দিয়েই তা শক্তিশালী ও পরিণত হয়।
বিশ্লেষকরা বলেন, বাজারের স্বাস্থ্যকর অবস্থার মানে হলো ওঠানামা থাকা। কারণ চাহিদা ও জোগানের এই প্রাকৃতিক ভারসাম্যই আসল শক্তি। তাই বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হয়ে বরং প্রত্যেক ওঠানামার ভেতরে লুকানো সুযোগগুলো খুঁজে বের করা উচিত।
পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এই আস্থাই নতুন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করে, উদ্যোক্তাদের ঝুঁকি নিতে সাহস জোগায়, এবং অর্থনীতিকে গতিশীল করে।
যখন বিনিয়োগকারীরা বাজারকে ভরসা দেন, তখন সরকারও সাহসী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করে না। নীতিনির্ধারকরা জানেন—জনগণের আস্থা টিকে থাকলে বাজার আরও বিস্তৃত হবে, বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
আজকের ধাক্কা যদি কাউকে হতাশ করে, তবে মনে রাখা দরকার—এই পতনের ভেতরেই ভবিষ্যতের উত্থান লুকিয়ে আছে। যেমন কৃষক জানেন, মাটি চাষ করার পরই ফসল ফলবে; তেমনি বিনিয়োগকারীরাও জানেন, সাময়িক পতনের পরই বাজারে আসবে নতুন সাফল্যের মৌসুম।
পুঁজিবাজার শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি মানুষের আশা, আস্থা এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নের প্রতিফলন। সূচক নামবে, আবার উঠবে—কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থাই বাজারের আসল শক্তি।
তাই মনে রাখুন—
"আজকের ধাক্কা সাময়িক, কিন্তু সম্ভাবনার আলো চিরন্তন।"
এই আস্থা একদিন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী, আরও উজ্জ্বল এবং আরও প্রাণবন্ত ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যাবে।