প্রকাশিত : ১৭:৩৮
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আজকের লেনদেন দিনশেষে কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করলে আশার বার্তাই সামনে আসে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দিনের শেষ দিকে সূচকের পতন দেখলেও লেনদেনের পরিমাণ, খাতভিত্তিক অগ্রগতি এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক দিক নির্দেশ করছে। এ বাজার এখনো প্রাণবন্ত, আস্থার ভরসায় টিকে আছে এবং সামনের দিনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (DSEX) আজ ৪৪.৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫,৩৩৭.১৪-এ। পাশাপাশি ডিএসইএস (DSES) সূচক ৮.৭০ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ (DS30) সূচক ১১.৮৭ পয়েন্ট কমেছে। শতাংশের হিসেবে ডিএসইএক্স সূচক নেমেছে ০.৮৩%, যা তুলনামূলকভাবে স্বাভাবিক ওঠানামার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
দিনের লেনদেনে মোট ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৫টি ট্রেড সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১৮.৩৭ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে এবং লেনদেনের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪৪.৭৯ কোটি টাকা। যদিও বাজারে পতন বেশি, তবুও ৪৩টি কোম্পানির দর বেড়েছে এবং ৫০টি অপরিবর্তিত থেকেছে।
আজকের লেনদেনের বাজার মানচিত্রে দেখা গেছে—ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস, ব্যাংক, জীবন বিমা এবং প্রকৌশল খাত অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস খাত
এই খাত দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতীক। দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রসার ও ওষুধ শিল্পের বিশ্ববাজারে বিস্তৃতি বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল আয়ের সম্ভাবনা তৈরি করছে। আজও এ খাত লেনদেনের তালিকায় শীর্ষে ছিল।
ব্যাংক খাত
ব্যাংক খাতের শেয়ার এখনো বিনিয়োগকারীদের কাছে অন্যতম ভরসার জায়গা। অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে এই খাতের ধারাবাহিক উপস্থিতি আজকের লেনদেনেও প্রতিফলিত হয়েছে।
জীবন বিমা খাত
দিন দিন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বিমা খাতে। দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিমার গুরুত্ব বিনিয়োগকারীদের ভরসা জুগিয়েছে।
প্রকৌশল খাত
অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প সম্প্রসারণ এবং নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোও আজকের লেনদেনে আলোচনায় ছিল।
দিনের লেনদেনে বেশ কিছু কোম্পানির দরপতন হলেও সবুজ সংকেতও স্পষ্ট ছিল। বিশেষ করে SQURPHARMA, SAPORT প্রভৃতি কোম্পানি বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে অবদান রেখেছে। অন্যদিকে বিমা ও খাদ্য খাতের কিছু শেয়ার দরবৃদ্ধির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা জাগিয়েছে।
‘মার্কেট ম্যাপ’-এর পরিসংখ্যান বলছে—যদিও বাজারে ৩০১টি কোম্পানির দরপতন ঘটেছে, তবে ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতি কোনোভাবেই কমেনি। বরং সক্রিয় লেনদেনের মধ্য দিয়েই বাজারের প্রাণবন্ততা প্রকাশ পেয়েছে।
খাতভিত্তিক গেইনার তালিকায় আজ ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যাংক, টেক্সটাইল, জীবন বিমা, মিউচুয়াল ফান্ড ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে ছিল। এ খাতগুলোর শেয়ার প্রমাণ করছে—দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করলে এখনো নিরাপদ আয়ের পথ খোলা আছে।
সেক্টর-বাই-ভ্যালু বিশ্লেষণে স্পষ্টভাবে দেখা যায়—ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যাংক ও জীবন বিমা খাত এককভাবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। মূলত এই খাতগুলোতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রবাহিত হয়েছে।
আজকের লেনদেন শেষে বিশ্লেষকদের অভিমত—এ পতন সাময়িক, দীর্ঘমেয়াদে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। অনেক বিনিয়োগকারী ইতোমধ্যে স্বল্পমেয়াদি দরপতনের মধ্যেও তাদের আস্থা বজায় রেখেছেন। কারণ, লেনদেনের পরিমাণ ও খাতভিত্তিক অংশগ্রহণের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করছে—বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা অটুট আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন—এই সময় ধৈর্যশীল বিনিয়োগকারীরাই লাভবান হবেন। বাজারের স্বাভাবিক ওঠানামার মধ্যেও যেসব খাত টিকে আছে, সেখানে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ভবিষ্যতে সুফল আসবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেও পুঁজিবাজারে ইতিবাচক বার্তা বিদ্যমান। আজ সূচক কমলেও লেনদেনের গতি, খাতভিত্তিক অগ্রগতি এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ স্পষ্ট করছে—পুঁজিবাজার এখনো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
বাজার বিশ্লেষকরা একমত—আজকের পতনকে হতাশাজনক হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং এটিকে বাজারের স্বাস্থ্যকর সামঞ্জস্য বা স্বাভাবিক ওঠানামার অংশ হিসেবেই গণ্য করা দরকার। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, আজকের লেনদেন একটি বার্তাই দিচ্ছে—বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও অংশগ্রহণেই পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
এক কথায় বলা যায়, পুঁজিবাজারে আজকের ধাক্কা সাময়িক, কিন্তু এর ভেতর লুকিয়ে আছে শক্তিশালী সম্ভাবনা। সূচকের পতনের মাঝেও বাজারের প্রাণবন্ততা প্রমাণ করছে—এ বাজারই বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য নতুন আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।