প্রকাশিত : ১০:৩৯
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আজকের লেনদেন ছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সূচকের সার্বিক পতন বাজারকে হতাশার আঁধারে ঢেকে দিতে চাইলেও, এর মাঝেই কিছু খাতের ইতিবাচক সাড়া বিনিয়োগকারীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এক কথায়— আজকের দিনটি যেমন ছিল ধসের, তেমনি ছিল আশাবাদেরও।
সূচকের চিত্র: সাময়িক ধস, কিন্তু পুরোপুরি অন্ধকার নয়
আজকের লেনদেনে ১ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি ট্রেড হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০.৬৪ কোটি শেয়ার বা ইউনিট হাতবদল হয়েছে, যার মোট আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬২১ কোটি টাকারও বেশি। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে প্রমাণ করছে, বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় ছিলেন এবং লেনদেনে ভাটা পড়েনি।
তবে সূচকের দিক থেকে বাজার দিনশেষে ছিল নেতিবাচক—
ডিএসইএক্স (DSEX) কমেছে ৬৮ পয়েন্ট বা ১.২৫%
ডিএসইএস (DSES) কমেছে ১৯ পয়েন্ট বা ১.৬৩%
ডিএস৩০ (DS30) কমেছে ২৩ পয়েন্ট বা ১.১২%
সব মিলিয়ে বাজার লাল রঙে রাঙালেও, এর ভেতর থেকে ঝলসে উঠেছে সবুজের আলো।
মার্কেট ম্যাপ: হতাশার সাগরে আশার দ্বীপ
আজকের মার্কেট ম্যাপে অধিকাংশ সেক্টর লাল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ব্যাংক, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ব্যাপক দরপতন দেখা গেছে।
তবে আশার আলো জ্বালিয়েছে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস এবং কিছু বীমা খাত। বাজারের পতনের মাঝেও এই খাতগুলোর সবুজ উপস্থিতি বিনিয়োগকারীদের মনে ভরসা জাগিয়েছে।
একজন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর ভাষায়, “শেয়ারবাজারে পতন মানেই সর্বনাশ নয়। বরং এর মাঝেই লুকিয়ে থাকে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ।”
সেক্টরভিত্তিক চিত্র: কে কতটা উজ্জ্বল?
Top Sectors by Gainer বিশ্লেষণে—
টেক্সটাইল খাতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি আজ শীর্ষ গেইনার হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে।
লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ফুড অ্যান্ড অ্যালায়েড খাতেও ইতিবাচক প্রবণতা ছিল।
অন্যদিকে Top Sectors by Value বিশ্লেষণে দেখা গেছে সর্বাধিক লেনদেন হয়েছে—
১. টেক্সটাইল,
২. ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যালস,
৩. ইঞ্জিনিয়ারিং,
৪. ব্যাংক,
৫. বীমা।
এটি প্রমাণ করে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনও এই খাতগুলোতে অটুট।
টেক্সটাইল খাত: আস্থার মশাল
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান। তাই সূচকের পতন সত্ত্বেও টেক্সটাইল খাত শীর্ষ গেইনার হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে স্থিতিশীল সম্ভাবনা দেখছেন।
ওষুধ ও রসায়ন শিল্প: ভবিষ্যতের শক্তি
ওষুধ ও কেমিক্যাল খাত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। বিশেষ করে জেনেরিক ওষুধ রপ্তানির সাফল্য বিনিয়োগকারীদের আস্থার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। আজকের লেনদেনেও সেই আস্থার প্রতিফলন স্পষ্ট।
বীমা খাত: ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে
লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতেও দেখা গেছে সবুজের ছোঁয়া। অর্থনৈতিক চাপে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে বীমার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সামগ্রিক বিশ্লেষণ: অন্ধকারের পরেই আলো
আজকের লেনদেনে সূচক পতনের আড়ালে ফুটে উঠেছে এক ভিন্ন বার্তা— আস্থার স্রোত এখনও জীবন্ত। ৩০৬টি কোম্পানি দর হারালেও কিছু খাতের ইতিবাচক অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মনে করিয়ে দিয়েছে, বাজার কখনো একমুখী নয়। পতনের মাঝেও থাকে সম্ভাবনার ঝলক।
অর্থনৈতিক চাপ, বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতা ও নীতি-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ বাজারকে সাময়িকভাবে প্রভাবিত করছে। তবে বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে— পতন সাময়িক, আস্থা দীর্ঘমেয়াদী।
দিনশেষে সূচক লাল হলেও বার্তা ছিল ইতিবাচক। আজকের বাজার যেন আমাদের মনে করিয়ে দিল— শেয়ারবাজার কেবল সংখ্যার খেলা নয়, এটি আস্থা, প্রত্যাশা ও দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্নের প্রতিফলন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, আর এর সঙ্গে শেয়ারবাজারও একদিন তার প্রকৃত শক্তি দিয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। সাময়িক ধস সেই যাত্রার একটি ক্ষুদ্র অধ্যায় মাত্র।
আজকের শিক্ষা হলো: বাজারে পতনের মাঝেও লুকিয়ে থাকে আশার আলো, আর সেই আলোই আগামী দিনের বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে নতুন সম্ভাবনার পথে।