প্রকাশিত : ০৫:৩২
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৫:৪৭
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক । তবে গেটওয়ে স্থাপন বাধ্যতামূলক থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে সেটি ছাড়াই সেবা চালু করে। সম্প্রতি চারটি গেটওয়ে স্থাপনের দাবি জানিয়ে এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-তে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে।
চিঠি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পপ (Point of Presence) থেকে সিঙ্গাপুর ও ওমানের পপে আন্তর্জাতিক ব্যাকহল সংযোগ দিতে চায় তারা। এজন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আইপিএলসি (International Private Leased Circuit) এবং আনফিল্টারড আইপি কিনে ব্যবহার করবে। তবে এ সেবা শুধুমাত্র বিদেশি গ্রাহকদের জন্য হবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারকারীরা এর আওতায় পড়বে না।
আইপিএলসি সাধারণত আন্তর্জাতিক ডেটা পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আনফিল্টারড আইপি ব্যবহারে ডেটা স্থানীয় ফিল্টারিং বা আইনগত নজরদারি এড়িয়ে যেতে পারে। এ কারণে সাইবার নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
বিটিআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “গাইডলাইনে আইপিএলসি কেবল সিগনালিংয়ের জন্য। ট্রাফিকের জন্য নয়। অনুমোদন দিলে আমাদের মনিটরিংয়ের বাইরে ডেটা চলে যাবে, আইনগত ইন্টারসেপশনও সম্ভব হবে না।”
তবে অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হলে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব। কারণ স্টারলিংক স্থানীয় অপারেটর—ফাইবার অ্যাট হোম, বিএসসিসিএল, সামিট—এর কাছ থেকে আইপি কিনবে। এতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি আয় করবে।
ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাব্বির বলেন, “এটি মূলত আন্তর্জাতিক ট্রাফিক বহনের জন্য। বিশ্ব এখন উন্মুক্ত—সেখানে ফিল্টারড আইপি ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এর মাধ্যমে আয় বাড়াতে পারবে।”
প্রযুক্তি খাতের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, অর্থনৈতিক সুফল থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে নজরদারির বাইরে থাকা ডেটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর বাহনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাশেদ আমিন বিদ্যুৎ বলেন, “আনফিল্টারড আইপি ব্যবহারে কিছু ট্রাফিক মনিটরিংয়ের বাইরে চলে যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি দুর্বল হতে পারে। তাই অনুমোদন দিলে বিশেষ টেকনিক্যাল মনিটরিং সেল গঠন জরুরি।”
বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিউল আজম পারভেজ বলেন, “স্টারলিংকের আবেদন পর্যালোচনায় আছে। গাইডলাইনে কী সুযোগ আছে, আর দেশের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা যায়—সব দিক যাচাই করে সিদ্ধান্ত হবে।”
স্টারলিংক ইতোমধ্যেই গাজীপুর, রাজশাহী ও যশোরে চারটি গেটওয়ে স্থাপনের দাবি করলেও সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর কি না তা নিশ্চিত হতে পারেনি বিটিআরসি। ফলে একদিকে বাংলাদেশ বৈশ্বিক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কে অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে নিরাপত্তা, নীতিমালা ও বাজার ভারসাম্য রক্ষার বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়াচ্ছে।