প্রকাশিত : ১৭:৫৮
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৮:০০
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✍️ রেজুয়ান আহম্মেদ
ভোরের নতুন আলোয় পুরনো দলের ছায়া
২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা রাজনৈতিক একাধিপত্যের অবসানের পর দেশের শিক্ষা ও রাজনীতি অঙ্গনে গণতান্ত্রিক চর্চার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫ কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচনই ছিল না; এটি ছিল পরিবর্তিত রাজনৈতিক চেতনার এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ডাকসুর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করতে চাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের জন্য এই নির্বাচন ছিল নিজেদের অবস্থান যাচাইয়ের এক মোক্ষম সুযোগ। তবে নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয় যে, ছাত্রদলের শোচনীয় পরাজয় কেবল সংখ্যার হিসেবে একটি ব্যর্থতা নয়, বরং এটি নতুন রাজনৈতিক বার্তা বুঝতে না পারায় বিএনপির মৌলিক ব্যর্থতারই গভীর প্রতিফলন। এই পরাজয় ইঙ্গিত দেয় যে, নতুন প্রজন্মের ভোটাররা এখন প্রচলিত দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে ভিন্ন ধরনের রাজনীতির প্রত্যাশী।
একথা ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন, যা প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিহিত ছিল। সেবার ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নিরঙ্কুশ দাপটের মধ্যেও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল হক নুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছিলেন। সেটি ছিল চিরাচরিত ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে এক ফাটল, যা পরিবর্তনের আভাস দিয়েছিল। তবে ২০২৫ সালের নির্বাচন সেই ফাটলকে এক সম্পূর্ণ ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনে রূপ দিয়েছে, যা থেকে বিএনপি এবং তাদের ছাত্র সংগঠন একটি সুস্পষ্ট ও নির্মম শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সংখ্যায় নয়, চেতনার পরাজয়: ২৫-এর ডাকসুর ফলাফল বিশ্লেষণ
২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল কোনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রতিফলন ছিল না, বরং এটি ছিল একপেশে ও চূড়ান্ত এক পরাজয়ের আখ্যান। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট' ভিপি, জিএস এবং এজিএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ভিপি পদে বিজয়ী সাদিক কায়েম ১৪,০৪২ ভোট পেয়ে জয়ী হন, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পান মাত্র ৫,৭০৮ ভোট। একইভাবে, সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী এস এম ফরহাদ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর বারী হামিমকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেন; ফরহাদ পেয়েছেন ১০,৭৯৪ ভোট, আর হামিম পেয়েছেন ৫,২৮৩ ভোট। অন্যান্য সম্পাদকীয় ও সদস্য পদগুলোতেও এই জোটের প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন, যা দলগত জোটের শক্তির এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
এই ফলাফল প্রমাণ করে যে, ছাত্রসমাজ এখন কেবলমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে ভোট দিচ্ছে না। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেখানে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়ে প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, সেখানে ২০২৫ সালের নির্বাচনে একটি সুসংগঠিত, প্ল্যাটফর্ম-ভিত্তিক জোট সামগ্রিক বিজয় লাভ করে। এই জয় কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতিফলন নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট আদর্শ ও সুস্পষ্ট এজেন্ডার প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থারই বহিঃপ্রকাশ। এখানেই নিহিত রয়েছে একটি গভীর পরিবর্তনের সূত্র। আগস্ট ২০২৪-এর আন্দোলনের মূল চেতনা ছিল এর নির্দলীয় ও ছাত্র-নেতৃত্বাধীন চরিত্র, যার লক্ষ্য ছিল সুনির্দিষ্ট সংস্কার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের ছাত্রশাখা হিসেবে ছাত্রদলের কাছে এই চেতনার সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করার এক বিশাল সুযোগ ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল থেকে দেখা যায়, তারা এতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে, ঐতিহাসিকভাবে বিতর্কিত ও দমন-পীড়নের শিকার ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বাধীন বিজয়ী জোট শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক দলগুলোর পুরনো "ট্যাগ" বা লেবেল এখন আর শিক্ষার্থীদের কাছে তেমন প্রাসঙ্গিক নয়। শিক্ষার্থীরা এখন কেবল ক্ষমতাসীন দলের বিরোধী শক্তি খুঁজছে না, বরং তারা এমন একটি সংগঠিত, সংস্কারমুখী ও বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প খুঁজছে, যারা তাদের প্রকৃত আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে সক্ষম।
ছাত্রদলের ব্যর্থতার মূল কারণ: কাঠামোগত দুর্বলতা ও আদর্শিক বিভ্রান্তি
ছাত্রদলের পরাজয়ের মূলে রয়েছে একাধিক কাঠামোগত দুর্বলতা এবং আদর্শিক দিকনির্দেশনার অভাব। প্রথমত, একটি কার্যকর জোট গঠনে তাদের সুস্পষ্ট ব্যর্থতা লক্ষ্য করা যায়। যেখানে 'ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট' বিভিন্ন মতাদর্শের ছাত্রগোষ্ঠীকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে ছাত্রদল এককভাবে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত এক বহুমেরুভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে তাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি বিরোধী শিবিরের ভেতরেও যে বিভেদ রয়েছে, তার প্রমাণ মেলে যখন বিজয়ী জোটের পক্ষ থেকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক কার্যকলাপ ও 'ফ্যাসিবাদী স্লোগান' ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। এই ধরনের ঘটনা বিরোধী রাজনৈতিক মহলে গভীর সমন্বয়হীনতারই ইঙ্গিতবাহী।
দ্বিতীয়ত, ছাত্রদল একটি সুসংগঠিত ও ছাত্রকেন্দ্রিক ইশতেহার উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বিজয়ী জোট একটি সংক্ষিপ্ত, আধুনিক ও ছাত্র-কেন্দ্রিক ইশতেহার উপস্থাপন করেছে, যেখানে তারা "ছয়টি হ্যাঁ এবং ছয়টি না"-এর মাধ্যমে সমসাময়িক ইস্যু যেমন ইসলামোফোবিয়া ও সাইবার বুলিং-এর বিরুদ্ধে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এর বিপরীতে, ছাত্রদলের প্রচারণায় ঐতিহ্যবাহী সরকারবিরোধী বক্তব্যের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট ভিশন বা কর্মপরিকল্পনার অভাব ছিল। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ছাত্র সংগঠনগুলো প্রায়শই তাদের মূল রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্ভবত এই সীমাবদ্ধতাই ছাত্রদলকে একটি স্বাধীন, শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক এজেন্ডা প্রণয়ন থেকে বিরত রেখেছে।
তৃতীয়ত, সাংগঠনিক ও কাঠামোগত দুর্বলতাও তাদের পরাজয়ের অন্যতম কারণ। একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রদলের নারী প্রার্থীদের নির্বাচনী নমিনেশন ফরম জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও এই অভিযোগের বিস্তারিত বা সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি, তবুও এই ধরনের ঘটনা এবং তা মোকাবিলায় ছাত্রদলের ব্যর্থতা তাদের মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পেশিশক্তির যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে, কিন্তু ছাত্রদল সম্ভবত এখনও সেই পুরনো পরিবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল না, যেখানে প্রকৃত জনসমর্থন ও সুসংগঠিত তৃণমূল সংগঠন অপরিহার্য। এই পরাজয় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এই যে, একটি রাজনৈতিক সত্তা যদি তার পুরনো গল্প বা আখ্যান পরিবর্তন করতে না পারে, তাহলে তা নতুন বাস্তবতায় তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়। ছাত্রদল তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে বিজয়ী জোট তাদের নিজস্ব আদর্শিক ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সংস্কার ও ছাত্রকল্যাণের নতুন মুখপাত্র হিসেবে উপস্থাপন করতে সফল হয়েছে।
বিএনপির জন্য কঠিন শিক্ষা: ডাকসুর আয়নায় জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি
ডাকসুর ফলাফল বিএনপির জন্য কিছু গভীর ও কঠিন বার্তা বহন করে, যা কেবল ছাত্ররাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করতে পারে।
শিক্ষা ১: 'ট্যাগিং পলিটিক্স'-এর ভূমিধস পরাজয় বিএনপির জন্য সবচেয়েবড় শিক্ষা হলো 'ট্যাগিং পলিটিক্স' বা প্রতিপক্ষকে বিশেষ লেবেল দিয়ে হেয় করার রাজনীতির কার্যকারিতা হারানো। আইন অনুষদের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের একটি মন্তব্য এই যুক্তির মূল ভিত্তি দিয়েছে: ছাত্রশিবিরের মতো একটি সংগঠন, যারা দীর্ঘকাল ধরে দমন-পীড়ন ও নেতিবাচক প্রচারণার শিকার হয়েছে, তাদের সমর্থিত জোটের এই বিজয় প্রমাণ করে যে, পুরনো রাজনৈতিক লেবেল আর জনমতকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হচ্ছে না। বিএনপি নিজেও দীর্ঘকাল ধরে নানা ধরনের অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। তাদের জন্য এটি একটি আত্মসমীক্ষার মুহূর্ত। তাদের সুযোগ ছিল এই 'ট্যাগ-মুক্ত' পরিবেশে বিজয়ী হয়ে একটি বিকল্প আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার, কিন্তু তারা তা না করে এমন একটি দলের কাছে পরাজিত হয়েছে, যারা নিজেদের পুরনো পরিচয়কে সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করতে পেরেছে।
শিক্ষা ২: সাংগঠনিক সংকট ও নতুন নেতৃত্বের অন্বেষণ ছাত্রদলের পরাজয় বিএনপির বৃহত্তর সাংগঠনিক স্থবিরতার এক সরাসরিপ্রতিফলন। বহু বছর ধরে বিএনপি নেতৃত্বশূন্যতা এবং তৃণমূল থেকে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে না পারার সমস্যায় জর্জরিত। ছাত্রদলের কার্যকরভাবে সংগঠিত হতে না পারা, নিজেদের প্রার্থীদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হওয়া এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট তৈরি করতে না পারার ঘটনা বিএনপির মূল সংকটেরই একটি ক্ষুদ্র চিত্র। এই নির্বাচন বিএনপির জন্য এক সতর্কবার্তা যে, কেবল ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা যাবে না; একটি দলকে অবশ্যই তার সাংগঠনিক প্রাণবন্ততা প্রমাণ করতে হবে এবং নতুন, গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে, যারা বর্তমান প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম।
শিক্ষা ৩: গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণে ব্যর্থতা ২০২৪ সালের আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল একটিঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ, যা দুর্নীতি-বিরোধী ও সংস্কারমুখী চেতনায় চালিত হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি এই নতুন চেতনার প্রকৃত রূপ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তাদের ছাত্র সংগঠনের পরাজয় ইঙ্গিত দেয় যে, তারা এখনও পুরনো রাজনৈতিক রীতিনীতিতেই আটকে আছে। অন্যদিকে, বিজয়ী জোট 'সংস্কার' এবং 'গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রক্ষা'-র এজেন্ডা গ্রহণ করে নিজেদেরকে গণঅভ্যুত্থানের আদর্শের প্রকৃত ধারক হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপি এই চেতনার সঠিক উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পেরে কেবল আরেকটি পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে।
প্রাসঙ্গিকতার চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের পথ
ডাকসু নির্বাচন ছিল বিএনপির জন্য এক আয়না, যা তাদের বর্তমান বাস্তবতাকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। এই আয়না দেখিয়েছে যে, বিএনপি এবং তার ছাত্র সংগঠন ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তারা একটি বিজয়ী জোট তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, একটি আধুনিক ও সুনির্দিষ্ট ইশতেহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কয়েক দশকের রাজনৈতিক আধিপত্যের অবসানের সুযোগকে কাজে লাগাতেও ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির জন্য প্রাসঙ্গিক থাকার পথটি কঠিন হলেও সুস্পষ্ট। এর জন্য প্রয়োজন তাদের সাংগঠনিক কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তন আনা এবং কেবল 'সরকারবিরোধী' শক্তি না হয়ে একটি নতুন, সংস্কারমুখী ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃত প্রবক্তা হিসেবে নিজেদের কৌশলগতভাবে পুনর্বিন্যাস করা। ডাকসু নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম একটি নতুন সূচনার জন্য প্রস্তুত। এখন প্রশ্ন হলো, বিএনপি কি সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত, নাকি তারা অতীতের রাজনৈতিক যুগের এক স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে? বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ছাত্ররাই প্রায়শই পরিবর্তনের অগ্রদূত। ডাকসুর রায় সেই অগ্রদূতদের কাছ থেকে আসা এক সুস্পষ্ট বার্তা।