প্রকাশিত :  ০৮:০০
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:০৫
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে বনগাঁও জমিদার বাড়ি: ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী

শ্রীমঙ্গলে বনগাঁও জমিদার বাড়ি: ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী

সংগ্রাম দত্ত: প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য, যা আজও দাঁড়িয়ে আছে সময়ের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায়

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে রয়েছে এক জমিদার বাড়ি, যা আজ জনশূন্য। তবে এই বাড়ির একমাত্র জীবন্ত সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে শতানন্দ সেনের নির্মিত প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো শিবমন্দির।

শতানন্দ সেন আনুমানিক ১৭৫০ খৃষ্টাব্দে যশোর জেলার বনগাঁও থেকে এসে এখানে প্রথম বসতি স্থাপন করেন। দেবপূজা অর্চনার জন্য তিনি বাড়ির পশ্চিম পাড়ের বিশাল দীঘির পাশে এই মন্দিরটি স্থাপন করেন।

“দেওয়াল ফাটল দিয়ে, পরগাছা জমে থাকা, ধ্বংসপ্রায় অবস্থা—তবুও মন্দিরটি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে,” জানালেন দেবব্রত সেন চৌধুরী, জমিদার বাড়ির উত্তরসূরী।

১৩৩৫ বাংলার ভূমিকম্প মন্দিরের মধ্যভাগে বিশাল ফাটল সৃষ্টি করেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাক হানাদাররা জমিদার বাড়ি ও মন্দিরে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মন্দিরটি দীর্ঘদিন ধরে তেমনভাবে সংস্কার পায়নি।

বৃটিশ শাসনামলে এই বংশের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘চৌধুরী’ উপাধি। জমিদার বাড়ির ইতিহাসে খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত মোক্তার কুঞ্জ কিশোর সেন চৌধুরী এবং ডা. চন্দ্র কিশোর সেন চৌধুরী। তবে বর্তমানে পরিবারের উত্তরসূরিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং বিদেশে বসবাস করছেন।

স্থানীয়রা মনে করেন, শতানন্দের জমিদারি ঐতিহ্যের শেষ নিদর্শন হিসেবে শিবমন্দিরটির সংরক্ষণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। “যে কোনো মুহূর্তে মন্দিরটি ভেঙে যেতে পারে,” সতর্ক করে বললেন একজন প্রবীণ গ্রামবাসী।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে বনগাঁও গ্রামের এই মন্দিরটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নিঃশব্দ সাক্ষী হিসেবে। যদিও জমিদার বাড়ি হারিয়েছে প্রাণ, শতানন্দের নির্মিত শিবমন্দির এখনও প্রমাণ করে একসময়ের ঐশ্বর্য, ধর্মীয় অনুরাগ এবং প্রজন্মের ইতিহাস।

নিঃশব্দ দেয়াল, ফাটল ও ভাঙা ইটের সারি—সবই যেন গল্প করছে শতানন্দের জমিদার বাড়ির। এই মন্দিরের প্রতিটি ইট এক এক করে বলে দিচ্ছে ইতিহাসের গল্প।



Leave Your Comments




ভ্রমণ এর আরও খবর