প্রকাশিত : ০৬:৩২
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✍️ ড. আরিফুজ্জামান
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চললেও সাম্প্রতিক সময়ে একটি খাত বিনিয়োগকারীদের কাছে নতুন করে আলোচনায় এসেছে—ইনস্যুরেন্স খাত। স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনার কারণে এই খাতকে এখন অনেক বিশ্লেষক “ভবিষ্যতের সোনালি খাত” হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
বাংলাদেশে ইনস্যুরেন্স খাত দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছে। শিল্প ও বাণিজ্যের বিস্তৃতি, ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বীমার চাহিদা বাড়ছে। ফলে প্রিমিয়াম আয় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কোম্পানিগুলোকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
শুধু আর্থিক ফলাফলেই নয়, সেবার মানোন্নয়ন ও দাবি নিষ্পত্তির দ্রুততার কারণেও গ্রাহকদের আস্থা বাড়ছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এ তালিকাভুক্ত বেশ কিছু ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সম্প্রতি আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এতে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীল আয়ের উৎস হিসেবে ইনস্যুরেন্স খাত একটি নিরাপদ বিকল্প।
একজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বলেন—
“ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো সাধারণত স্থিতিশীল মুনাফা দেয় এবং ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এই খাত আমাদের জন্য ভরসার জায়গা।”
দেশের অধিকাংশ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এখন প্রযুক্তি-নির্ভর সেবার দিকে ঝুঁকছে। অনলাইন পলিসি, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে দাবি দাখিল এবং স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন বিনিয়োগকারীদের কাছে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও বিগ ডেটা ব্যবহার করে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সরকার সম্প্রতি বীমা খাতকে শক্তিশালী করতে আধুনিক বীমা আইন প্রণয়ন, স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ এবং ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) খাতটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য কাজ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব নীতিগত সহায়তা ইনস্যুরেন্স খাতকে পুঁজিবাজারের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত করবে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ইনস্যুরেন্স খাত বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। স্থিতিশীল আয়, ধারাবাহিক লভ্যাংশ, আধুনিক সেবা এবং সরকারের নীতিগত সহায়তা—সব মিলিয়ে এই খাত বিনিয়োগকারীদের কাছে ভবিষ্যতের সোনালি ক্ষেত্র হিসেবে ধরা দিচ্ছে।
এক কথায়, ইনস্যুরেন্স খাতই এখন বিনিয়োগকারীদের আস্থার নতুন ভরসা।