প্রকাশিত : ১১:০৪
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১১:১৫
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি এক কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি কেউ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নিয়ে চিন্তা করে, তবে তা জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক হবে। ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট দেশের শীর্ষ তিন রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী এবং ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি এই বার্তা দেন।
এই বিবৃতিটি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ শাসনপদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য চরম আকার ধারণ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার এই সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন অবস্থান মূলত রাজনৈতিক মহলের ভিন্ন ভিন্ন দাবির মুখে একটি নির্দিষ্ট পথরেখা স্থাপনের প্রচেষ্টা হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার কঠোর হুঁশিয়ারি ও রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
১.১ নির্বাচনের বিকল্প নেই: ড. ইউনূসের স্পষ্ট ঘোষণা
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন যে, ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্টভাবে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা নির্বাচন হিসেবে আয়োজন করার লক্ষ্য রয়েছে।
তবে এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট থেকে এসেছে। এর আগে একটি পূর্ববর্তী সংবাদে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬-এর এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই তারিখ নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এটি জাতির প্রত্যাশা পূরণ করবে না। তিনি এপ্রিল মাসের তারিখকে পাবলিক পরীক্ষা, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং পবিত্র রমজান মাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে এটিকে একটি ‘অযৌক্তিক ধারণা’ বলে অভিহিত করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদের মতে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলে প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং বিএনপি নেতাদের কঠোর বাক্যবাণ আসলে এক ধরনের চাপ প্রয়োগের কৌশল। এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার এই ঘটনাটি ইঙ্গিত দেয় যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আসা চাপ এবং তাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতি সংবেদনশীল। এই পরিবর্তনটি চলমান রাজনৈতিক চাপ প্রশমিত করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হয়।
১.২ বিএনপির প্রত্যাশা ও অসন্তোষ: সালাহউদ্দিন আহমদের বক্তব্য
বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধিদল সাম্প্রতিক ঘটনাবলীকে নির্বাচন বিলম্বিত করার একটি ষড়যন্ত্র কিনা, সে বিষয়ে তাদের আশঙ্কার কথা জানায়। দলটি দীর্ঘকাল ধরে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে এবং পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছে। তাদের এই উদ্বেগ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গভীরভাবে প্রোথিত, যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বহু দশক ধরে তীব্র আস্থাহীনতা বিদ্যমান। নির্বাচন বর্জনের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিজ্ঞতার কারণে তাদের বর্তমান উদ্বেগ ভিত্তিহীন নয়, বরং এটি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অবিশ্বাসেরই ধারাবাহিক প্রতিফলন।
১.৩ জুলাই সনদ ও গণপরিষদ: জামায়াত ও এনসিপির ভিন্ন অবস্থান
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী ‘জুলাই সনদের’ অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়, অন্যদিকে ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য আগামী নির্বাচনকে গণপরিষদ নির্বাচন হিসেবে অনুষ্ঠানের দাবি উত্থাপন করে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যটি কোনো বিমূর্ত ধারণার বিরুদ্ধে নয়, বরং সরাসরি এই নির্দিষ্ট দাবিগুলোর বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা। তিনি মনে করেন, এই ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ‘বিকল্প’ প্রস্তাবনাগুলোই জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং জাতিকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এই ভিন্ন ভিন্ন দাবিগুলো প্রমাণ করে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেবল প্রধান দুটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিভিন্ন দলের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। প্রতিটি দলই তাদের নিজস্ব পথকে একমাত্র বৈধ উপায় হিসেবে মনে করছে। প্রধান উপদেষ্টার কঠোর অবস্থানটি এসব ভিন্নমতকে একীভূত করে একটি একক, সুনির্দিষ্ট পথে চালিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার দীর্ঘ ইতিহাস ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা
২.১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক: ত্রয়োদশ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসের মূল দ্বন্দ্বগুলো বুঝতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ইতিহাস পর্যালোচনা অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে একটি বিতর্কিত একতরফা নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সহিংসতার মুখে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা একাধিক সফল ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করেছিল।
তবে, ২০০৭ সালে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিত জরুরি অবস্থার সময় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে, যা দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে, ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এই সংশোধনীটি আইনি ভিত্তি পেলেও বিরোধী দলগুলো এটিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখেছিল এবং ফলস্বরূপ ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা পুরোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্কের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর জন্য এক ভিন্ন রূপরেখা নিয়ে এসেছে।
২.২ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আস্থাহীনতার শেকড়
বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সংকট কেবল আইনি বা সাংবিধানিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থাহীনতার ফল। সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) এবং টিআইবির মতো সুশীল সমাজের সংস্থাগুলো বহু বছর ধরেই এই সমস্যার ওপর আলোকপাত করেছে। তারা যুক্তি দিয়েছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলেও, এটিকে বাতিল করার আগে একটি জাতীয় ঐকমত্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অপরিহার্য ছিল। তাদের মতে, এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘দায়িত্বহীন’ আচরণে উৎসাহিত করেছিল, কারণ তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর ছেড়ে দিত।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞরা ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ‘সদিচ্ছার অভাবকে’ দায়ী করেন। প্রধান উপদেষ্টার বার্তাটি এই গভীর প্রাতিষ্ঠানিক আস্থাহীনতার বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ। তিনি একটি নির্দিষ্ট নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ম্যান্ডেট ও সামনের চ্যালেঞ্জ
৩.১ ড. ইউনূস সরকারের মূল লক্ষ্য: নির্বাচন ও সংস্কার
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ম্যান্ডেট হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারের কাছে হস্তান্তর করা। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। একই সঙ্গে, তিনি নির্বাচনের পাশাপাশি একটি টেকসই নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়েও আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি থেকে বোঝা যায়, এই সরকারের দ্বৈত দায়িত্ব রয়েছে: একদিকে দেশ পরিচালনা করা, অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা। তার এই দ্বৈত দায়িত্বই সরকারকে রাজনৈতিক চাপ এবং সমালোচনার মুখে ফেলছে।
৩.২ রাজনৈতিক চাপ ও ঝুঁকির বিশ্লেষণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে চতুর্মুখী রাজনৈতিক চাপের মধ্যে কাজ করছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যার প্রমাণস্বরূপ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নীতি আরোপের ঘোষণা উল্লেখযোগ্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাব্বির আহমেদের মতে, বিএনপি নেতাদের কঠোর মন্তব্যগুলো প্রধান উপদেষ্টার ওপর চাপ প্রয়োগের একটি কৌশল। এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের ঘটনাটি এই চাপের স্পষ্ট প্রতিফলন। এই বহুমুখী চাপ ও মতপার্থক্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, যেমনটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ তাদের বিশ্লেষণে সতর্ক করেছে। প্রধান উপদেষ্টার কড়া বার্তাটি এই ভিন্ন ভিন্ন চাপকে প্রতিহত করে একটি একক পথরেখা স্থাপন করার চেষ্টা, যদিও এটি মূল রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি বহন করে।
স্থিতিশীলতার পথে একমাত্র বিকল্প: অবাধ নির্বাচন
৪.১ নির্বাচন বর্জন ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে সৃষ্ট নির্বাচন বর্জন ভোটার উপস্থিতি হ্রাস এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করে। যখন ব্যালটে কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থাকে না, তখন অসন্তুষ্ট জনগণ রাজপথে নেমে আসে, যা রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটি মূলত রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সুস্পষ্ট দ্বিমুখী পথের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে: হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতার লড়াইয়ে নামা, নয়তো আরও অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি করা। নির্বাচনের বিকল্পকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি একটি নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছেন যে, সাংবিধানিক পথেই একমাত্র বৈধ ক্ষমতা অর্জন সম্ভব। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর পুরোনো কৌশল—আন্দোলন ও সাংবিধানিক বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতা দখলের প্রবণতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে।
৪.২ সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার গুরুত্ব
বাংলাদেশের সংবিধান নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের মতামত প্রতিফলিত করে একটি সরকার গঠনের নির্দেশনা দেয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নির্বাচনকে ‘বার্ষিক রাজনৈতিক সংকট থেকে দেশকে রক্ষা’ করার একটি উপায় হিসেবে উল্লেখ করা তাঁর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের ইঙ্গিত দেয়। তাঁর বার্তাটি কেবল একটি রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সুস্থ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বহু পুরোনো অবিশ্বাস ত্যাগ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একমাত্র বৈধ পথ হিসেবে গ্রহণ করে। এই প্রচেষ্টা সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে আসার আগ্রহের ওপর। প্রধান উপদেষ্টার এই চূড়ান্ত হুঁশিয়ারিটি প্রমাণ করে যে, এই মুহূর্তে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই এবং সেই পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি জাতীয় অস্তিত্বের জন্য কতটা গভীর হতে পারে।