প্রকাশিত : ০৬:৩০
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংগ্রাম দত্ত
বৈঠকের প্রেক্ষাপট: তিয়ানজিনে SCO সম্মেলন: ২০২৫ সালের আগস্টে চীনের তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একত্রিত হন। এই সম্মেলনটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে তিনটি বৃহৎ শক্তি একত্রিত হয়ে একটি নতুন বৈশ্বিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা করেন।
তিন নেতার উদ্দেশ্য ও কৌশল
শি জিনপিং: বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থার নেতৃত্ব: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সম্মেলনকে ব্যবহার করেন একটি নতুন বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা গঠনের জন্য, যা পশ্চিমা প্রভাবের বিকল্প হতে পারে। তিনি "ড্রাগন ও হাতি" উপমা ব্যবহার করে ভারত ও চীনের সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয় ।
ভ্লাদিমির পুতিন: পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই সম্মেলনকে ব্যবহার করেন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। তিনি চীন ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ককে "কৌশলগত ও স্থিতিশীল" বলে উল্লেখ করেন এবং BRICS-এর মাধ্যমে একটি নতুন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো গঠনের আহ্বান জানান ।
নরেন্দ্র মোদি: ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। তিনি চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের জন্য আলোচনা করেন এবং SCO-এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানান ।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে প্রভাব
এই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
পাকিস্তান: চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়ন পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, কারণ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) ও অন্যান্য যৌথ প্রকল্পগুলিতে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে।
নেপাল ও ভুটান: এই দেশগুলো চীনের সঙ্গে সীমান্ত ও জলসম্পদ নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। ভারত-চীন সহযোগিতা তাদের জন্য নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশ: চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও, ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য নতুন কূটনৈতিক সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই নিয়ে আসতে পারে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই সম্মেলনটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে ভারত, চীন ও রাশিয়া একটি নতুন বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা গঠনের জন্য একত্রিত হচ্ছে। তবে, এই সহযোগিতা কতটা স্থায়ী হবে এবং এটি কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে।