প্রকাশিত : ১৯:০৯
৩১ আগষ্ট ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে। তারল্য সংকট, লাগামহীন খেলাপি ঋণ এবং একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা জনমনে গভীর আস্থাহীনতা তৈরি করেছে । এমন পরিস্থিতিতে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে এবং বাজেটে এ খাতে মূলধন সরবরাহের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেছে । এমন একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পটভূমিতে দাঁড়িয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংক তার ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স দিয়ে কেবল নিজের অবস্থানই সুসংহত করেনি, বরং পুরো খাতের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেই ব্যতিক্রমী আখ্যানটি হলো ব্র্যাক ব্যাংকের।
এই প্রতিবেদনটি ব্র্যাক ব্যাংকের সাম্প্রতিক সাফল্যকে কেবল একটি আর্থিক পরিসংখ্যান হিসেবে বিবেচনা না করে, বরং সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থার বিপরীতে এর উত্থানকে বিশ্লেষণ করবে। এটি কেন একটি সাধারণ বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, বরং পুরো খাতের জন্য একটি আস্থার প্রতীক, সেই বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এই ঐতিহাসিক উত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং সুদূরপ্রসারী কৌশল, শক্তিশালী কর্পোরেট সুশাসন এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের ফসল। এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করা হবে যে কেন ব্র্যাক ব্যাংক শেয়ারবাজারে একটি 'নতুন শক্তি' হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
পুঁজিবাজারে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ও নতুন পরিচয়
ঐতিহাসিক অর্জন: বাজার মূলধনে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-তে ব্র্যাক ব্যাংক একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে । এটি একটি অসাধারণ অর্জন, বিশেষ করে যখন দেশের আর্থিক খাতে আস্থার সংকট চরমে। এই অর্জনটি শুধু একটি আর্থিক পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি ব্যাংকটির পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ব্যাপারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের অবিচল আস্থার প্রতিফলন । ব্র্যাক ব্যাংকের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক কৌশল ও শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তির উপর ভর করে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতিতেও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারে।
শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
ডিএসইতে বাজার মূলধনের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর তালিকায় সাধারণত গ্রামীণফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো প্রতিষ্ঠিত বহুজাতিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্টদের আধিপত্য দেখা যায় । তবে এই প্রভাবশালী তালিকায় ব্র্যাক ব্যাংক এখন নিজেদের নাম সগৌরবে যুক্ত করেছে। ২০২৫ সালের আগস্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৪২.১৫ বিলিয়ন টাকা বাজার মূলধন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক ডিএসইতে চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানি হিসেবে অবস্থান করছে । গ্রামীণফোন (৪০৬.৩০ বিলিয়ন টাকা), স্কয়ার ফার্মা (১৯৭.৩২ বিলিয়ন টাকা) এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (১৫৪.১২ বিলিয়ন টাকা) এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের অবস্থান। একটি দেশীয় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য এই অবস্থান অর্জন করা সত্যিই অভাবনীয়, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে কেন এটি শেয়ারবাজারে একটি 'নতুন শক্তি' হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই অর্জনটি একটি গভীর অর্থনৈতিক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। যখন দেশের আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাবে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে , তখন ব্র্যাক ব্যাংকের বাজার মূলধনে এই অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি শুধু একটি কোম্পানির সাফল্য নয়, বরং অস্থিরতার সময়ে বিনিয়োগকারীদের 'ফ্লাইট টু কোয়ালিটি' (Flight to Quality) বা 'নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে' থাকার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। বাজারে যখন অন্যান্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম হ্রাস পাচ্ছে বা তারল্য সংকটে ভুগছে, তখন ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি এই প্রবণতাকে আরও জোরালো করে। এমনকি যখন একজন স্বতন্ত্র পরিচালক তার সকল শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, তখন ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য হ্রাস না পেয়ে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে । সাধারণত এ ধরনের ঘটনা শেয়ারের মূল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কিন্তু ব্র্যাক ব্যাংকের ক্ষেত্রে এর উল্টোটি ঘটেছে, যা শক্তিশালী বিনিয়োগকারী আস্থার পরিচায়ক। এর পিই রেশিও ৫.৯৩-এর মতো একক অঙ্কে থাকা ইঙ্গিত দেয় যে এর শেয়ারে বিনিয়োগ এখনো নিরাপদ এবং আকর্ষণীয়, যা বাজারের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের বিপরীতে একটি ব্যতিক্রমী চিত্র ।
সাফল্যের নেপথ্যে: কৌশলগত প্রবৃদ্ধি ও সুশাসন
ব্র্যাক ব্যাংকের এই ঐতিহাসিক উত্থানের পেছনে কোনো আকস্মিক ঘটনা বা সৌভাগ্য লুকিয়ে নেই। বরং এটি সুদূরপ্রসারী, কৌশলগত এবং সুশৃঙ্খল নীতির প্রতিফলন। ব্যাংকের জন্মলগ্ন থেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে মনোযোগ দেওয়ার ইতিহাস তার সাফল্যের প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে ।
কৌশলগত ভিত্তি: এসএমই খাতে নেতৃত্ব
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেনের মতে, মুনাফা বৃদ্ধির পেছনে এসএমই খাতের প্রবৃদ্ধিই প্রধান কারণ ছিল । ব্র্যাক ব্যাংক কেবল এই খাতে ঋণ বিতরণকারী হিসেবে কাজ করেনি, বরং দেশের তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য এক নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে, ব্যাংকটি এক লাখেরও বেশি নতুন সিএমএসএমই গ্রাহক যুক্ত করেছে এবং সমগ্র ব্যাংক খাতের জামানতবিহীন সিএমএসএমই ঋণের ৪৩ শতাংশ একাই বিতরণ করেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকটির গভীর প্রভাবের একটি স্পষ্ট প্রমাণ ।
ডিজিটাল উদ্ভাবন ও গ্রাহক আস্থা অর্জন
ডিজিটাল রূপান্তরে ব্র্যাক ব্যাংকের ধারাবাহিক বিনিয়োগ তাদের সাফল্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আস্থা অ্যাপ এবং eKYC প্ল্যাটফর্মের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলো কেবল ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে সহজ করেনি, বরং গ্রাহকদের জন্য একটি স্বচ্ছ ও নিরাপদ বিকল্প তৈরি করেছে । একটি আর্থিক খাতে যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ও কেলেঙ্কারি নিত্যদিনের ঘটনা, সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো গ্রাহকদের লেনদেনে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। ২০২৪ সালের শেষে আস্থা অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮ লাখে পৌঁছেছে এবং এই অ্যাপের মাধ্যমে দেড় লাখ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হয়েছে । একইভাবে, eKYC-এর মাধ্যমে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সহজ প্রক্রিয়া (৭৭% অ্যাকাউন্ট এই মাধ্যমে খোলা হয়েছে) গ্রাহকদের ব্যাংকের দোরগোড়ায় নিয়ে এসেছে । এই ডিজিটাল উদ্যোগগুলো কেবল পরিচালন ব্যয় কমায়নি, বরং এটি একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, যা জনগণের আস্থাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।
আর্থিক সক্ষমতা: প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার চিত্র
ব্র্যাক ব্যাংকের ধারাবাহিক আর্থিক পারফরম্যান্স তার শক্তিশালী ভিত্তির প্রতিফলন। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফা ৩৫ শতাংশ বেড়ে ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল । এরপর ২০২৪ সালে সেটি আরও বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে রেকর্ড ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকায় পৌঁছায় । ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেও এই ধারা অব্যাহত ছিল, যেখানে ব্যাংকটি ৫৩% প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে ৯০৬ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করে ।
দেশের গড় আমানত প্রবৃদ্ধি (১১%) এবং ঋণ প্রবৃদ্ধির (১০-১১%) তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি (৩৪%) এবং ঋণ প্রবৃদ্ধি (২৬%) ছিল অনেক বেশি, যা এর শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি প্রমাণ করে । এই অসাধারণ প্রবৃদ্ধির ধারা ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) এবং নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি)-এর ধারাবাহিক বৃদ্ধিতেও প্রতিফলিত হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় ।
শক্তিশালী কর্পোরেট সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
অন্যান্য ব্যাংকের মতো দুর্বল সুশাসনের পথে না হেঁটে, ব্র্যাক ব্যাংক কীভাবে কর্পোরেট সুশাসন ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে তাদের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে, তা এর সাফল্যের আরেকটি মূল কারণ । ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে অ্যানুয়াল রিস্ক কনফারেন্স-এর মতো উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা যায় । এই সম্মেলনে ডিজিটাল ব্যাংকিং এবং সাইবার ঝুঁকির মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তাদের পূর্বপ্রস্তুতি প্রমাণ করে। এই সুশাসন নীতির প্রতিফলন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংককে পঞ্চমবারের মতো দেশের ‘শীর্ষ টেকসই ব্যাংক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও ব্লুমবার্গ ইএসজি রেটিং ২০২৪-এ ব্র্যাক ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩.৮ সামগ্রিক স্কোর অর্জন করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলেও এর গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করে ।
অস্থির ব্যাংকিং খাতের পটভূমিতে এক ভিন্ন গল্প
ব্র্যাক ব্যাংকের সাফল্যকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে দেশের ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটকে বোঝা অত্যন্ত জরুরি। দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের আগ্রাসন এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি বেড়েছে । জুন ২০২৫ শেষে এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ । এই পরিসংখ্যানগুলো পুরো খাতের ভঙ্গুরতা এবং সুশাসনের অভাবের চিত্র তুলে ধরে। তারল্য সংকটে ভুগছে অনেক ব্যাংক, এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুর্নীতি ও অনিয়মের পুরোনো চিত্রগুলো বেরিয়ে আসছে ।
সংকট কীভাবে সুযোগে পরিণত হলো?
যখন পুরো খাত খেলাপি ঋণ আর আস্থাহীনতার সংকটে নিমজ্জিত, তখন ব্র্যাক ব্যাংকের সাফল্য এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক কৌশল ও সুশাসন থাকলে প্রতিকূল পরিবেশেও একটি প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে পারে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। ব্র্যাক ব্যাংকের পারফরম্যান্সকে অন্য ব্যাংকের সাথে তুলনা করে তার স্থিতিশীলতাকে আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা যায়। যদিও সামগ্রিক খাতের তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী, তবুও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার সামান্য বেড়ে ৩.৩৭% হয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২.৬৩% । যদিও এটি পুরো খাতের তুলনায় অনেক কম, কিন্তু এটি প্রমাণ করে যে ব্র্যাক ব্যাংকও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয় ।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ: বাজার বিশ্লেষকদের মতামত
ব্র্যাক ব্যাংকের এই উত্থান থেকে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য অনেক কিছু শেখার আছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ব্র্যাক ব্যাংকের এই উত্থান থেকে অন্যান্য ব্যাংকগুলো শিক্ষা নিতে পারে । তবে, ব্র্যাক ব্যাংকের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও বিদ্যমান। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতিমালার মধ্যে ব্যাংকটিকে তার কৌশলগত অবস্থান ধরে রাখতে হবে। যদিও তাদের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলকভাবে কম, তবে সামান্য বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক চাপ থেকে তারাও সম্পূর্ণ মুক্ত নয় ।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ব্র্যাক ব্যাংকের সাফল্য শুধু একটি কোম্পানির ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এর এসএমই-কেন্দ্রিক, মূল্যবোধভিত্তিক, এবং ডিজিটাল কৌশলগুলো একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে, যা অনুসরণ করে অন্যান্য ব্যাংকও নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে পারে। এই মডেলটি প্রমাণ করে যে, যথাযথ সুশাসন, গ্রাহককেন্দ্রিকতা এবং উদ্ভাবনী কৌশল অবলম্বন করলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও একটি ব্যাংক কেবল টিকে থাকতে পারে না, বরং প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। দেশের ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন, সুশাসন নিশ্চিত করা, এবং দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই খাতের সামগ্রিক চিত্র পরিবর্তন সম্ভব ।
একটি মডেল যা অন্যদের জন্য অনুসরণীয়
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সময়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ঐতিহাসিক উত্থান কেবল একটি আর্থিক সাফল্য নয়, বরং পুরো বেসরকারি ব্যাংকিং খাতের জন্য এক নতুন আশার আলো। বাজার মূলধনে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে এবং ডিএসইতে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর কাতারে উঠে এসে ব্র্যাক ব্যাংক প্রমাণ করেছে যে, সুশাসন, কৌশলগত প্রবৃদ্ধি এবং গ্রাহক আস্থাই একটি প্রতিষ্ঠানের মূল শক্তি। এর এসএমই-কেন্দ্রিক, মূল্যবোধভিত্তিক এবং ডিজিটাল কৌশলগুলো একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে, যা অনুসরণ করে অন্যান্য ব্যাংকও নিজেদেরকে শক্তিশালী করতে পারে। ব্র্যাক ব্যাংকের উত্থান প্রমাণ করে যে, আর্থিক খাতে মুনাফা অর্জনের চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করা সম্ভব—আস্থা, স্থিতিশীলতা এবং একটি টেকসই অর্থনৈতিক মডেলের প্রতিষ্ঠা। এই মডেলটি কেবল একটি কোম্পানির ভবিষ্যৎ নয়, বরং পুরো বেসরকারি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি আশার আলো যা পথ দেখাবে এক নতুন দিগন্তের দিকে।