প্রকাশিত :  ০৭:৫৩
২৪ আগষ্ট ২০২৫

পাহাড়চূড়ায় তুর্কি নকশার দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

শ্রীমঙ্গলের মহাজিরাবাদে মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ:)

পাহাড়চূড়ায় তুর্কি নকশার দৃষ্টিনন্দন মসজিদ
সংগ্রাম দত্ত

বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গল প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্যে ভরপুর। সবুজ পাহাড়, চা-বাগান আর ঝর্ণাধারার অপার লীলাভূমির মাঝেই মহাজিরাবাদ পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে উঠেছে এক অনন্য স্থাপনা—মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ:)। তুর্কি স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মসজিদ এখন শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়, বরং এক নান্দনিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।

আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার
উপমহাদেশের খ্যাতনামা সুফি সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ:) আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ:)। তাঁর স্মৃতি অম্লান রাখতে সাহেবজাদা খাজা টিপু সুলতান পাহাড়চূড়ায় এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এ স্থাপনা আজ আধ্যাত্মিক চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনন্য প্রতীক।

পাহাড়চূড়ায় ওঠার যাত্রা
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ৬-৭ কিলোমিটার দূরে মহাজিরাবাদের বালিশিরা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট ওপরে উঠতে হয় ১৩৯টি সিঁড়ি বেয়ে। সিঁড়ির দু’পাশের সাদা আর মাঝের লাল রঙের মিশ্রণ সবুজ পাহাড়ি প্রকৃতির সঙ্গে অসাধারণভাবে মিশে গিয়ে এক অপূর্ব আবহ সৃষ্টি করে। সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে উঠতে চোখে পড়ে চারপাশের সবুজ পাহাড়, চা-বাগান, লেবু ও আনারসের খেত—যা যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর মনে দোলা দেয়।

নান্দনিক স্থাপত্য ও সুযোগ-সুবিধা
তুর্কি নকশার এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ৮০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ভেতরে ঝুলছে চীন থেকে আনা এক বিশাল ঝাড়বাতি, যা মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। চারপাশে লাগানো হয়েছে নানান রঙের ফুলগাছ, পুরো এলাকা সাজানো হয়েছে যেন জান্নাতুল ফেরদৌসের প্রতিচ্ছবি।
এখানেই শেষ নয়—মসজিদের পাশে রয়েছে কবরস্থান, ভিআইপিদের আগমনের জন্য হেলিপ্যাড, গেস্ট হাউজ এবং দরিদ্র-অসহায় মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাকেন্দ্র। আধ্যাত্মিক সাধনার পাশাপাশি মানবসেবার বার্তাও ছড়িয়ে দিচ্ছে এই মসজিদ কমপ্লেক্স।

ভক্ত-পর্যটকের মিলনমেলা
প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক মসজিদটি ঘুরে দেখতে আসেন। অনেকে শুধু নামাজ আদায় করতে, আবার অনেকে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই আসেন এখানে। প্রতিবছর বার্ষিক ওরসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খাজা এনায়েতপুরীর (রহ:) প্রায় আট হাজার ভক্তের মিলনমেলায় মুখর হয়ে ওঠে এই পাহাড়চূড়া।

ফাউন্ডেশনের দায়িত্বে পরিচালনা
মসজিদটির নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে খাজা মোজাম্মেল হক (রহ:) ফাউন্ডেশন। তাঁদের আর্থিক সহযোগিতা ও পরিকল্পনায় এই পাহাড়চূড়ায় আজ দাঁড়িয়ে আছে এমন এক স্থাপত্য, যা একদিকে ধর্মীয় অনুশীলনের জায়গা, অন্যদিকে শান্তি, সৌন্দর্য ও মানবসেবার আলোকবর্তিকা।

Leave Your Comments




ভ্রমণ এর আরও খবর