প্রকাশিত :  ০৭:৪১
২৪ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৫০
২৪ আগষ্ট ২০২৫

শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী অরণ্যে প্রাচীন গিরিখাতসমূহ: ভূতাত্ত্বিক ও পর্যটন সম্ভাবনা

শ্রীমঙ্গলের সীমান্তবর্তী অরণ্যে প্রাচীন গিরিখাতসমূহ: ভূতাত্ত্বিক ও পর্যটন সম্ভাবনা

সংগ্রাম দত্ত

বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তবর্তী নাহার চা-বাগানের পাশের পুঞ্জি এলাকায় সম্প্রতি ৩০টিরও বেশি প্রাচীন গিরিখাত শনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর দেয়া নাম ও লোকাচার অনুযায়ী গিরিখাতগুলোর একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও রয়েছে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়, গিরিখাতগুলো ভূতাত্ত্বিকভাবে দীর্ঘকালীন ক্ষয় ও ক্ষরণ প্রক্রিয়ার ফল। এই নিবন্ধে আবিষ্কারের ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, ভূতাত্ত্বিক তাৎপর্য, বর্তমান প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পর্যটন ও সংরক্ষণ সম্ভাবনা আলোচিত হয়েছে।

ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলকে সাধারণত “বাংলাদেশের চা-রাজধানী” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তবর্তী অরণ্যে প্রাচীন গিরিখাতসমূহ আবিষ্কার এ অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গুরুত্ব নতুনভাবে উন্মোচিত করেছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো—

গিরিখাতসমূহের ভূতাত্ত্বিক উৎপত্তি ও ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করা,

স্থানীয় সমাজ-সংস্কৃতি ও নামকরণের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা, এবং ভবিষ্যতে পর্যটন ও সংরক্ষণ সম্ভাবনা চিহ্নিত করা।

উপাত্ত ও পদ্ধতি :

২০০০ সালে উপজেলা সমন্বয়কারী তাজুল ইসলাম জাবেদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর সাক্ষাৎকার, প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণ এবং সরেজমিন ভ্রমণ থেকে সংগৃহীত তথ্য এই নিবন্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় গুণগত তথ্য বিশ্লেষণ (Qualitative Content Analysis) পদ্ধতি অনুসৃত হয়েছে।

ফলাফল :

গিরিখাতের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য

সংখ্যা: ৩০টিরও বেশি,

দৈর্ঘ্য: ন্যূনতম ~১ কিমি থেকে কয়েক কিমি পর্যন্ত,

ভূপ্রকৃতি: গভীর গিরিখাত, গুহা, ঝরনা, শিলা গঠন, ক্ষুদ্র জলপ্রপাত।

নামকরণ:

স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক দেয়া নাম—

লাসুবন: অর্থ পাহাড়ি ফুল

ক্রেম উল্কা, ক্রেম কেরি প্রভৃতি

নামকরণ প্রধানত উদ্ভিদ, ফুল-ফল, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও ভাষাগত ঐতিহ্যের ভিত্তিতে হয়েছে ।

ভূতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা:

স্থানীয় বিশ্বাস ও পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, হাজার বছরের প্রাকৃতিক ক্ষয়প্রক্রিয়ার (erosion) মাধ্যমে গিরিখাতগুলোর গঠন হয়েছে।

আলোচনা :

গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত করে যে গিরিখাতগুলো ভূতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক নিদর্শন, যা একদিকে শ্রীমঙ্গলের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করছে, অন্যদিকে পর্যটনের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করছে। তবে এরূপ অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং পর্যটন কার্যক্রম শুরু করলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। তাই পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (Environmental Impact Assessment - EIA) সম্পন্ন করা জরুরি।

প্রশাসনিক উদ্যোগ:

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে কয়েকটি সেতু ও সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য অভিজ্ঞ গাইড নিয়ে ভ্রমণ করা প্রয়োজন।

পর্যটন ও সংরক্ষণ সম্ভাবনা:

গিরিখাতগুলো সংরক্ষণ করা গেলে শ্রীমঙ্গলের পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায় যুক্ত হবে। বিশেষত:

দেশি ও বিদেশি পর্যটকের জন্য রোমাঞ্চকর গন্তব্য,

স্থানীয় নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি প্রচারের সুযোগ,

ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশ বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্র।

উপসংহার :

শ্রীমঙ্গলের প্রাচীন গিরিখাতসমূহ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। যথাযথ সংরক্ষণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে এগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়ায় পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।



Leave Your Comments




ভ্রমণ এর আরও খবর