প্রকাশিত : ০৯:০৬
২৩ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:৩৮
২৩ আগষ্ট ২০২৫
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কেয়া গ্রুপের প্রায় ৬৬ মিলিয়ন ডলার বা আট হাজার কোটি টাকার বেশি রপ্তানি আয় উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দেশের আর্থিক খাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে । এ ঘটনায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকের মাধ্যমে কোম্পানিটির প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা জমা হয়নি।
এই গুরুতর অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা চারটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) তলব করেছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)।
এফআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আগামী ২৬ আগস্ট সংশ্লিষ্ট চার ব্যাংকের এমডি, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের পরিচালককে সংস্থার কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কেয়া গ্রুপের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও রপ্তানি বাবদ প্রাপ্ত অর্থের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে। শুধু মৌখিক ব্যাখ্যা নয়, কেয়া গ্রুপের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং হারিয়ে যাওয়া রপ্তানি আয়ের লেনদেন সংক্রান্ত সকল নথি উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চার ব্যাংক
এফআরসি’র পাঠানো নোটিশ অনুযায়ী, বছরের পর বছর ধরে কেয়া কসমেটিক্স লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা জমা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চারটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের বিবরণে বলা হয়েছে:
১। সাউথইস্ট ব্যাংক: ২০০৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৪৬ লাখ ডলার জমা দেয় নি।
২। পূবালী ব্যাংক: ২০০৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২০ কোটি ১৯ লাখ ডলার জমা দেয় নি।
৩। ন্যাশনাল ব্যাংক: ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার জমা দেয় নি।
৪। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬৫ লাখ ডলার জমা দেয় নি।
সব মিলিয়ে এই চারটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ৬৬ কোটি ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা কেয়া গ্রুপের অ্যাকাউন্টে জমা না করার অভিযোগ উঠেছে।
পাল্টাপাল্টি দোষারোপ
এই ঘটনায় কেয়া গ্রুপ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক পাঠান সরাসরি ব্যাংকগুলোকে দায়ী করে বলেন, "ব্যাংকগুলো আমাদের রপ্তানি আয়ের বিশাল একটি অংশ সময়মতো জমা না করায় আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাদের এই গাফিলতির কারণেই আমাদের প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি হতে বাধ্য হয়েছে।" তিনি আরও জানান যে, এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিনি অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসি এবং এফআরসি-কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো কেয়া গ্রুপের দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, কেয়া গ্রুপই তাদের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেনি, যার কারণে কোম্পানিটিকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকলেও এফআরসি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করেছে।