প্রকাশিত : ০৭:৪৭
১৮ আগষ্ট ২০২৫
সংগ্রাম দত্ত
শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। কিন্তু পর্যটন সুবিধা ভোগের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ট্রেনের টিকিট সংকট। সীমিত আসন বরাদ্দ, কালোবাজারি, ও বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার দুরবস্থার কারণে পর্যটকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এই রিপোর্টে সংকটের কারণ, এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
পর্যটন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় খাত। শ্রীমঙ্গল, যাকে “চায়ের রাজধানী” বলা হয়, প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হাওর, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ নানা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের টানে। কিন্তু নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাত্রার অনিশ্চয়তা পর্যটন খাতের সম্ভাবনাকে সীমিত করছে। বিশেষত রেলপথের টিকিট সংকট এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সংগ্রহ ও পদ্ধতি
এই রিপোর্টে ব্যবহৃত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে—
জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে।
পর্যটক ও স্থানীয় ট্যুর গাইডদের মতামত থেকে।
প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত বক্তব্য থেকে।
পর্যবেক্ষণ ও ফলাফল
আসন বরাদ্দ সীমিত:
শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকা গামী ৪টি ও চট্টগ্রাম গামী ২টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে।
বরাদ্দ আসনের সংখ্যা মাত্র ৪৪৩টি।
পর্যটকের চাহিদার তুলনায় এই সংখ্যা অপ্রতুল।
কালোবাজারি:
অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, টিকিট কাউন্টারে ‘সোল্ড আউট’ দেখালেও কালোবাজারিদের কাছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে পাওয়া যায়।
এতে সাধারণ যাত্রী ও পর্যটকরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
সড়কপথের দুরবস্থা:
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন নির্মাণকাজে যানজট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
আগে যেখানে ৫–৬ ঘণ্টায় যাওয়া যেত, বর্তমানে ১২–১৪ ঘণ্টা লাগছে।
ফলে রেলপথে নির্ভরশীলতা বাড়ছে, কিন্তু টিকিট সংকট সমস্যা আরও তীব্র করছে।
পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব
পর্যটকরা অসন্তুষ্ট হয়ে পুনরায় শ্রীমঙ্গলে আসতে অনাগ্রহী হচ্ছেন।
স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
সামগ্রিকভাবে পর্যটন খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
আলোচনা :
সংকটের মূল কারণ হলো আসন বরাদ্দের ঘাটতি ও টিকিট ব্যবস্থাপনার অস্বচ্ছতা। একই সঙ্গে কালোবাজারি ও বিকল্প সড়ক যোগাযোগের অচলাবস্থা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এর প্রভাবে পর্যটনের টেকসই প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সুপারিশ :
পর্যটক বগি সংযোজন: প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে অন্তত একটি পর্যটন বগি যুক্ত করা প্রয়োজন।
আসন বরাদ্দ বৃদ্ধি: মৌসুমি চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত কোটার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডিজিটাল টিকিটিংয়ে স্বচ্ছতা: স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।
কালোবাজারি দমন: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান বাড়াতে হবে।
বিকল্প পরিবহন উন্নয়ন: সড়ক যোগাযোগ দ্রুত শেষ করে বিকল্প ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
উপসংহার
শ্রীমঙ্গলের পর্যটন বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনা বহন করে। কিন্তু ট্রেনের টিকিট সংকট এ সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাৎক্ষণিকভাবে আসন বরাদ্দ বৃদ্ধি, পর্যটন বগি সংযোজন ও টিকিট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে এ সমস্যা অনেকাংশে লাঘব হবে। নিরাপদ, সহজলভ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যময় যাতায়াত নিশ্চিত হলেই শ্রীমঙ্গলের পর্যটন খাত টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।