প্রকাশিত : ০৮:০৫
১৫ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২৯
১৫ আগষ্ট ২০২৫
সংগ্রাম দত্ত: বাংলাদেশের চা শিল্পের ইতিহাসে ডানকান ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৮৫৯ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো থেকে আগত ওয়াল্টার ও উইলিয়াম ডানকান কলকাতায় তাদের ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে তাঁরা তুলা ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও, ১৮৬০-৬১ সালে চা শিল্পে প্রবেশ করেন এবং কাচার অঞ্চলের ডলু ও জালিংগা চা বাগানের এজেন্সি গ্রহণ করেন। এই সময় থেকেই ডানকান ব্রাদার্সের চা শিল্পে যাত্রা শুরু হয়।
চা উৎপাদনে নেতৃত্ব
বর্তমানে ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ চা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। তাদের ১৬টি চা বাগান রয়েছে, যা মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এই বাগানগুলো থেকে বার্ষিক ১২-১৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়, যা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ১৬%। তাদের চা বাগানগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চমানের চা উৎপাদন করা হয়।
বহুমুখী ব্যবসা ও সামাজিক দায়িত্ব
চা শিল্পের পাশাপাশি ডানকান ব্রাদার্স বিভিন্ন খাতে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। তারা রাবার উৎপাদন, বোতলজাত খনিজ জল, বীমা, লিজিং এবং গুদামজাতকরণে জড়িত। তাদের সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে তারা কর্মীদের জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল ও আবাসিক স্কুল পরিচালনা করে।
পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ
ডানকান ব্রাদার্স পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়। তাদের লস্করপুর চা বাগান ২০২০ সালে “গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছে। এই বাগানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বৃক্ষরোপণ, অগ্নি নিরাপত্তা এবং কর্মীদের জন্য স্নানাগারসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবাদ
২০১৫ ও ২০১৯ সালে চাঁদপুর চা বাগানের ৫১২ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেন। এই জমিতে প্রায় ১৫,০০০ শ্রমিক বসবাস করতেন, এবং তাদের জীবিকা এই জমির উপর নির্ভরশীল ছিল। এই ঘটনা শ্রমিকদের জীবিকা ও আবাসনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
ডানকান ব্রাদার্স কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে একটি প্রক্রিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে কাজ করছে । দক্ষতা বৃদ্ধি, উত্তরাধিকার পরিকল্পনা এবং কর্মীদের জন্য স্পষ্ট ক্যারিয়ার পথ নির্ধারণে উদ্যোগ নিয়েছে ।
ডানকান ব্রাদার্স বাংলাদেশের চা শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের ইতিহাস, বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা দেশের অর্থনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। তবে শ্রমিকদের অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা ও উদ্যোগ প্রয়োজন।