প্রকাশিত :  ১৯:৫৪
১১ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৫৫
১১ আগষ্ট ২০২৫

ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা : গেইমের আসক্তি থেকে সন্তানদেরকে কীভাবে রক্ষা করবেন?

ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবা : গেইমের আসক্তি থেকে সন্তানদেরকে কীভাবে রক্ষা করবেন?

শায়খ আব্দুল কাইয়ূম

"আমরা কি আমাদের সন্তানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইন স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে রেখে অলস করে দিচ্ছি? তারা তাদের জীবনের অমূল্য সময় নষ্ট করছে যা তারা আর কোনোদিনও ফিরে পাবে না? নাকি আমরা তাদেরকে প্রতিদিন কুরআন পড়তে, হাদিস শিখতে, রাসুল (সাঃ) এর জীবনী অধ্যয়ন করতে, ঘরের কাজে সাহায্য করতে এবং উত্তম চরিত্র গড়ে তুলতে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি?"

ইস্ট লন্ডন মসজিদের প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ আবদুল কাইয়ূম ৮ আগস্ট শুক্রবার জুমার খুতবায় কথাগুলো বলছিলেন । তাঁর খুতবার বিষয়বস্তু ছিলো, যেহেতু যুক্তরাজ্যে বর্তমানে স্কুল হলিডে চলছে, এই সময়টুকু আমাদের সন্তানেরা কীভাবে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে পারে।

তিনি বলেন, হলিডের অর্ধেক সময় ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। আর বাকি অর্ধেক সামনে রয়েছে । এটি একটি অমূল্য সুযোগ, যা আমরা নষ্ট করার সামর্থ্য রাখি না। অনেকেই ছুটিকে শুধুমাত্র বিশ্রাম, বিনোদন ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার সময় হিসেবে দেখে থাকে । কিন্তু একজন মুমিনের জন্য হলিডে এর চেয়েও অনেক বড় অর্থ বহন করে । এটি হলো আত্মিক উন্নতির, পরিবারিক সম্পর্ক মজবুত করার এবং এমন ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার সোনালী সুযোগ, যা সারাজীবন স্থায়ী হতে পারে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: পাঁচটি কাজ অন্য পাঁচটি কাজের আগে কাজে লাগাও। জীবনকে কাজে লাগাও মৃত্যুর আগে, সুস্বাস্থ্যকে অসুস্থতার আগে, অবসর সময়কে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে,  যৌবনকে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার আগে, এবং সম্পদকে কাজে লাগাও গরীবি পেয়ে বসার আগে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “দুটি নিয়ামত আছে যা অনেকেই হারিয়ে ফেলে। একটি হলো সুস্বাস্থ্য, অন্যটি অবসর সময়।

আমরা আমাদের নিজেদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে: আমরা কি আমাদের সন্তানদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইন স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে অলস করে দিচ্ছি এবং এমন অমূল্য সময় নষ্ট করছি যা তারা আর কোনোদিন ফিরে পাবে না? নাকি আমরা তাদেরকে প্রতিদিন কুরআন পড়তে, হাদিস শিখতে, রাসুল (সাঃ) এর জীবনী অধ্যয়ন করতে, ঘরের কাজে সাহায্য করতে এবং উত্তম চরিত্র গড়ে তুলতে দিকনির্দেশনা দিচ্ছি?

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন রাখাল এবং প্রত্যেকেই তার পালিতদের (সন্তান-সন্ততি) জন্য দায়িত্বশীল।”

অভিভাবকরাই সন্তানের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক । আমরা সন্তানদের মাদরাসা ও স্কুলে পাঠালেও, তাদের ভিত্তি তৈরি হয় ঘরেই। কোনো উপকারী কাজ না করে সময় নষ্ট করা বড় ক্ষতি।

ইমাম হাসান আল-বাসরি (রহ) বলেছেন: “আমি এমন লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, যারা সময়কে এমনভাবে রক্ষা করত যেমন তোমরা তোমাদের অর্থ-সম্পাদ রক্ষা করো। আমরা কেউ ১০ পাউণ্ড হারাতে চাই না, কিন্তু অজান্তেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা হারিয়ে ফেলি।

তিনি আরও বলেছেন: “হে আদম সন্তান, তুমি কেবল কয়েক দিনের সমষ্টি। যখনই একটি দিন চলে যায়, তোমার একটি অংশ হারিয়ে যায়।”

তাহলে, কীভাবে আমরা এই ছুটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি? এখানে কিছু করণীয়:

পরিবারের সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়া, বিশেষ করে ফজর। প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াতের নিয়ম করা।  নবীদের কাহিনি ও সীরাত পড়া। স্ক্রিন টাইম কমিয়ে শারীরিক কার্যকলাপে উৎসাহিত করা। জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় দক্ষতা শেখানো—যেমন রান্না, মেরামত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ঘরের কাজে সাহায্য। আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সম্পর্ক মজবুত করা। সম্ভব হলে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়া।

আমাদের তরুণদের সামনে দুটি বড় বিপদ—অতিরিক্ত সময় বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো, যার ফলে পরিবার থেকে দূরে সরে যাওয়া; এবং অতিরিক্ত সময় স্ক্রিনে ব্যয় করা। দুটোই খারাপ অভ্যাসের জন্ম দিতে পারে এবং ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দুর্বল করতে পারে।

চলুন, আমরা ঘরে ভালোবাসা ও যত্নের সম্পর্ক গড়ে তোলায় মনোযোগ দিই। প্যারেন্টিং শুধু শৃঙ্খলা আর শাস্তি দেওয়া নয়; বরং সম্পর্ক, কোমলতা ও দয়ার ব্যাপার।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ যখন কোনো পরিবারের কল্যাণ চান, তখন তিনি তাদের মধ্যে কোমলতা দান করেন  । চিৎকার ও কঠোরতা সন্তানদের দূরে সরিয়ে দেয়। যেমন শিক্ষকেরা ছাত্রদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে বাধ্য, তেমনি অভিভাবকদেরও সন্তানের সঙ্গে দয়া ও কোমল আচরণ করা উচিত।

কুরআনে আল্লাহ বলেন অতএব, "যখন তুমি তোমার কাজ শেষ করো, তখন দাঁড়াও (ইবাদতের জন্য)।”

 (সূরা আল-ইনশিরাহ, ৯৪:৭)

যখন আমাদের কাজ শেষ হয়, তখন আমাদের উচিত আল্লাহর ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মনোনিবেশ করা। এভাবে আমাদের ছুটি নষ্ট না হয়ে বরকতে ভরে উঠবে।

আসুন, আমরা এমন ছুটি কাটাই, যা ঈমানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করবে, সময়কে নিঃশেষ করবে না।

হে আল্লাহ, আমাদের সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করার তাওফিক দিন, আমাদের পরিবারকে বরকতময় করুন, আমাদের ঘরকে ভালোবাসা ও রহমতে ভরিয়ে দিন এবং আমাদের দিনগুলো সৎকর্মে পূর্ণ করে দিন। আমীন।


শায়খ আব্দুল কাইয়ূম : প্রধান ইমাম ও খতীব, ইস্ট লন্ডন মস্ক এন্ড লন্ডন মুসলিম সেন্টার।
শুক্রবার, ৮ আগস্ট ২০২৫।

Leave Your Comments




ধর্ম এর আরও খবর