প্রকাশিত :  ১৯:১১
১১ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১৯:৪৫
১১ আগষ্ট ২০২৫

সিলেটের সাদা পাথর: প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় ও অবৈধ লুটপাটের প্রভাব

সিলেটের সাদা পাথর: প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয় ও অবৈধ লুটপাটের প্রভাব

সংগ্রাম দত্ত: সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর এলাকা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে এখানে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ধলাই নদী থেকে সৃষ্ট সাদা পাথরের স্তর স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের আকর্ষণ করত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধভাবে ব্যাপক হারে পাথর উত্তোলন ও লুটপাটের ফলে এই এলাকা প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হচ্ছে।

এই গবেষণায় সাদা পাথরের বর্তমান অবস্থা, লুটপাটের কারণ, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।

পাথর লুটপাটের পরিস্থিতি:

২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে জমে থাকা পাথর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংরক্ষিত হয় এবং এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক দুই সপ্তাহে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি পাথরের স্তরগুলো দুর্বৃত্তরা নৌকায় করে বহির্গত করছে। প্রশাসনের অপ্রতুল পদক্ষেপের কারণে প্রতিদিন শত শত নৌকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে।

স্থানীয়দের দাবী, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে শত কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সিলেটের সাদা পাথরের লুটপাট প্রসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও, কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ হয়নি।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া ও সমস্যা:

অবৈধ উত্তোলন ঠেকাতে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও, স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বলতা ও ভয়-ভীতি মিশ্রিত পরিস্থিতির কারণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রভাব:

অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর তীর অবক্ষয় এবং ভূমিধসের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। বালু স্তর নষ্ট হওয়ায় মাটি অস্থির হয়ে পড়ছে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এছাড়াও, পর্যটনের হার কমে যাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতে সংকট দেখা দিয়েছে, যা এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:

প্রশাসনের শক্তিশালী নজরদারি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

অবৈধ উত্তোলন রোধে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনর্গঠন ও পর্যটন বিকাশের জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।

সাদা পাথরের অবক্ষয় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্টের একটি দৃষ্টান্ত। দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই ক্ষতিকর পরিস্থিতি রোধ করা সম্ভব। প্রশাসনিক সমন্বয়, স্থানীয় অংশগ্রহণ এবং সুষ্ঠু পরিবেশ সংরক্ষণ পরিকল্পনার মাধ্যমে সাদা পাথর এলাকা পুনরায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।


Leave Your Comments




মত-বিশ্লেষণ এর আরও খবর