প্রকাশিত :  ১০:২৮
০৯ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৪০
০৯ আগষ্ট ২০২৫

৩৩ বছর ধরে নখ কাটেন না অরুণ

৩৩ বছর ধরে নখ কাটেন না অরুণ

শখের বসে মানুষ কত কিছুই না করেন। শখ পূরণ করতে অনেকে নানান ত্যাগ স্বীকার করতেও পিছপা হন না। এমনই এক শৌখিন মানুষের দেখা মিলেছে দিনাজপুরে। অরুণ কুমার সরকার (৪০) নামে এই ব্যক্তি শুধু শখ থেকে দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বাঁ হাতের নখ কাটেননি।

দীর্ঘদিন ধরে নখ না কাটার কারণে শুধু এলাকাতেই নয়, পুরো উপজেলাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। লোকমুখে শুনে অনেকেই ছুটে আসছেন অরুণ কুমারের বাড়িতে। তার হাতের নখ দেখার জন্য প্রতিদিনই ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ।

১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া অরুণ কুমারের নখ রাখা নিয়ে প্রথম দিকে মা-বাবার আপত্তি থাকলেও পরে তারাও ছেলের শখের কথা ভেবে তেমন কোনো আপত্তি করেনি বলে জানিয়েছে অরুণের পরিবার।

অরুণ কুমার সরকারের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে অরুণ কুমার চতুর্থ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় এক সপ্তাহ ধরে নখ না কাটায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে নখ কাটার জন্য বকাবকি করেন। কিন্তু সে না শুনে, নখ বড় হলে কেমন লাগবে তা দেখার জন্য বাম হাত লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে এবং নখ বড় করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে নখের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তার।

তখন থেকেই অরুণ কুমার বাম হাতের নখ কাটা বন্ধ করে দেন। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৩ বছর। নখগুলো এতোটাই বড় হয়ে গেছে যে, গাছের ডালের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে।

বর্তমানে অরুণ কুমারের বাম হাতের মধ্যমা আঙুলের নখ ১১ ইঞ্চি, অনামিকা ১৫ ইঞ্চি, কনিষ্ঠ ১৩ ইঞ্চি, বৃদ্ধাঙ্গুলি দেড় ইঞ্চি এবং তর্জনি ২ ইঞ্চি লম্বা হয়েছে।

অরুণের কাকাতো ভাই (গ্রাম সম্পর্কে) গৌতম কুমার রায় ও গ্রাম পুলিশ যোতিশ চন্দ্র রায় বলেন, অরুণ দীর্ঘদিন ধরে বাম হাতের নখ না কেটে রেখে দিয়েছে। আগে বিষয়টি ভালো না লাগলেও এখন নখগুলো দেখতে ভালোই লাগে।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) নূর ইসলাম বলেন, অরুণ কুমারের হাতের নখ দেখলে নিজেরও অবাক লাগে। এটি খুব ধৈর্যের বিষয়। নখগুলো দেখতে ভালোই লাগে। লোকজনও দেখতে আসে তার নখ।

উত্তর লক্ষ্মীপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, অরুণ কুমার আমাদের প্রাক্তন ছাত্র। ছাত্র থাকা অবস্থাতেও সে নখ কাটতো না। শিক্ষকরা এনিয়ে তাকে বকাবকিও করতো। কিন্তু সে হাত লুকিয়ে রেখে ক্লাস করতো। এখন তো সে তার নখের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে। এটি সাধনার বিষয়।

স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক লিয়াতক আলী বলেন, হাতের নখ বড় হলে নখের সঙ্গে রোগ জীবাণু শরীরে ঢুকতে পারে। এজন্য নখ না রাখাই ভালো। তবে যেহেতু অরুণ তার সখের নখ বড় করতে করতে এই পর্যায়ে এসেছে, এ জন্য তাকে নখগুলোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা উচিত।

হাতের নখের প্রসঙ্গে অরুণ কুমার সরকার বলেন, সখের বসেই নখ রাখা। প্রথম দিকে বাবা-মাসহ আত্মীয় স্বজন ও শিক্ষকরা বড় নখ নিয়ে আপত্তি করতো। পরে সবাই মেনে নিয়েছে।

তিনি আরও জানান, লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ২০০৩ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। বর্তমানে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের রয়েছে। ছেলের নামেই উত্তর লক্ষীপুর বাজারে ‘কান্না ডিজিটাল ফটো স্টুডিও’ ব্যবসা রয়েছে। সেখানে ছবি তোলা, বিকাশে টাকা লেনদেন, ফ্লেক্সিলোডসহ ডিস সরবরাহ ব্যবসার আয় দিয়েই চলে তার সংসার।

অরুণ কুমার আরও বলেন, বড় বড় নখের জন্য আগে ব্যবসায়ের কাজকর্মে অসুবিধা হতো। এখন আর তেমন কোনো সমস্যা হয় না। নখগুলোর প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে। এ কারণে বেড়ে ওঠা নখগুলো আর কোনোদিন কাটবো না। নখ আছে বলেই বিভিন্ন মানুষ দেখতে আসে। আমার নাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। নখগুলোকে টিকিয়ে রাখতে অনেক যত্ন করতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, নখ বড় হলে নখের ভেতর ময়লাসহ রোগ জীবাণু ঢুকে মানুষের বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাই হতে পারে। এতে স্বাস্থ্যহানির ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য দীর্ঘদিন না কেটে নখ রাখা ঠিক না। বড় নখ উল্টে গিয়ে আঙ্গুলেরও ক্ষতি হতে পারে।



Leave Your Comments




চিত্র-বিচিত্র এর আরও খবর