প্রকাশিত : ১০:১১
০৯ আগষ্ট ২০২৫
সর্বশেষ আপডেট: ১০:১৬
০৯ আগষ্ট ২০২৫
সংগ্রাম দত্ত
বাংলাদেশে রাবার চাষ একসময় অপ্রচলিত হলেও এখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন-উৎপাদন শিল্পে রূপ নিচ্ছে। দেশের চা-বাগান ও পাহাড়ি এলাকায় বিশেষভাবে রাবার উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। বনজ সম্পদের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি রাবার শিল্প গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং পরিবেশ রক্ষায়ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
রাবার শিল্পের সূচনা ও ইতিহাস:
বাংলাদেশে রাবার শিল্পের সূচনা হয় ১৯৫২ সালে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে রাবার গাছ রোপণের মাধ্যমে। পরে ১৯৫৭ সালে শ্রীলঙ্কা থেকে আনীত হেভিয়া ব্রাজিলিয়েনসিস জাতের বীজ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারা উৎপাদন করে পরিকল্পিতভাবে রাবার চাষ শুরু হয়।
১৯৮০ সালের দিকে বন অধিদপ্তর, BFIDC ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে রাবার চাষ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে রাবার চাষ বিস্তৃত।
প্রধান উৎপাদন এলাকা:
চা-বাগানের পার্শ্ববর্তী উঁচু জমি
পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ইত্যাদি এলাকাসমূহ।
সম্ভাবনা:
দেশের প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমি রাবার চাষের উপযোগী প্রাকৃতিকভাবে অনুকূল জলবায়ু ও মাটির গুণ চা-বাগান ও পাহাড়ি জমির সম্পূরক ব্যবহার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম দুধ-রাবার থেকে গ্লাভস, চাকা, ফুটওয়্যার, মেডিকেল সামগ্রীসহ বহু শিল্পে ব্যবহারযোগ্য কাঁচামাল
বর্তমান অবস্থা:
বিএফআইডিসি (BFIDC) ও প্রায় ৫০০টি বেসরকারি রাবার বাগান মিলিয়ে বছরে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টন ল্যাটেক্স উৎপাদন হয়। রাবার প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনে রয়েছে বেশ কিছু উন্নয়ন। বর্তমানে দেশের মোট ল্যাটেক্স চাহিদার প্রায় ৮০% স্থানীয়ভাবে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।
সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
আন্তর্জাতিক বাজারে দামের অস্থিরতা,
চাষাবাদের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না পাওয়া,
প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার ঘাটতি,
প্রশিক্ষিত শ্রমিক ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাব,
রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা ও নীতিগত জটিলতা,
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও রোগবালাইয়ের ঝুঁকি ।
প্রস্তাবনা ও করণীয়:
রাবার চাষে সরকারিভাবে ভর্তুকি ও সহজ ঋণ সুবিধা দেওয়া আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা রাবারভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা জাতীয় নীতিমালায় রাবারকে কৌশলগত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা।
উপসংহার:
রাবার শিল্প বাংলাদেশে বনজ অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, গবেষণা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এই শিল্প জাতীয় আয়ের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে। বিশেষ করে দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও চা-বাগানঘেরা উঁচু জমিকে কাজে লাগিয়ে রাবার চাষকে আরও সম্প্রসারিত ও লাভজনক করা সম্ভব। সময় এসেছে এই সম্ভাবনাময় খাতকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের।