প্রকাশিত :  ১৬:৪৪
০২ আগষ্ট ২০২৫

লোভাছড়া চা বাগানে শতবর্ষের ঝুলন্ত সেতু

লোভাছড়া চা বাগানে শতবর্ষের ঝুলন্ত সেতু

সংগ্রাম দত্ত: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও পর্যটন নগরী সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া চা-বাগানের নুনছড়া নদীর উপর অবস্থিত একটি ঝুলন্ত সেতু শত বছর পার করেও আজও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯২৫ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই সেতুটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম ঝুলন্ত সেতু হিসেবে পরিচিত। 

সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৪০ ফুট এবং প্রস্থ ৯.৫ ফুট। এর গায়ে খোদাই করে লেখা রয়েছে, "লোড নট টু এক্সিড থ্রি টন - এপ্রিল ১৯২৫", যা নির্দেশ করে যে এটি ৩ টনের বেশি ভার বহন করতে পারবে না। সেতুটির কাঠামো মূলত লোহার তৈরি এবং পাটাতন হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রথমে ব্রিটিশ কোম্পানির অধীনে লোভাছড়া চা-বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৪ সালে। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে বাগানটির মালিকানা পরিবর্তিত হয়ে জেমস লিও ফারগুসন নানকার অধীনে আসে। বর্তমানে বংশ পরম্পরায় চা-বাগানটি পরিচালিত হচ্ছে এবং সেতুটিও ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।

সেতুটির শতবর্ষ পূর্তিতে ২০২৫ সালের এপ্রিলে চা-বাগান মালিক পরিবারের পক্ষ থেকে ফেসবুকে একটি ধন্যবাদ বার্তা প্রকাশ করা হয়। এতে তারা সেতুটির নির্মাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সিলেট বিভাগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক রাসেন্দ্র দত্ত চৌধুরী বলেন,"কোনো স্থাপনার বয়স ১০০ বছর পূর্ণ হলে তা পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্বীকৃতি লাভ করে। সেতুটির স্থাপত্যশৈলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় এটি সংরক্ষণের দাবি রাখে।"

এই সেতুটি শুধু চা-বাগানের কাজে ব্যবহৃত হয়নি, বরং এটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি ফল্টের সঙ্গে সিলেটের সীমান্ত প্রান্তিক এই সেতুকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এক দৃষ্টিতে দেখেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সময়ের প্রভাব সত্ত্বেও সেতুটির স্থায়িত্ব ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যশৈলী আমাদের অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে। এটি সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।



Leave Your Comments




ভ্রমণ এর আরও খবর