প্রকাশিত :  ০৮:৫১
২৪ জুলাই ২০২৫

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও মহিয়সী নারী হেনা দাশ এর মৃত্যুবার্ষিকী

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী ও মহিয়সী নারী হেনা দাশ এর মৃত্যুবার্ষিকী

সংগ্রাম দত্ত: নারী নেত্রী হেনা দাশ। পারিবারিক নাম হেনা দত্ত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী,নানকার আন্দোলনের নেত্রী,ভাষা সৈনিক,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভানেত্রী,বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, ডঃ খুদরত -ই- খুদা শিক্ষা কমিশনের সদস্য,শামসুল হক শিক্ষা কমিশনের সদস্য,বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাবেক সভানেত্রী, আন্তর্জাতিক শিক্ষক সমিতির সদস্য।

১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী সিলেট শহরে জন্ম গ্রহন করেন। পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার স্বজনগ্রামের টাউনশীপে। লাখাই ঐতিহাসিক দত্ত বংশের মেয়ে। তাঁর পিতা রায় বাহাদুর এডভোকেট সতীশ চন্দ্র দত্ত এবং মাতা মনোরমা দত্ত। মনোরমা দত্ত ( জমিদার নন্দিনী) ছিলেন চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের জমিদার জগৎ চন্দ্র বিশ্বাসের মেয়ে। 

১৯৩০ সালে হেনা দত্তের  পিতা রায় বাহাদুর এডভোকেট সতীশ চন্দ্র দত্ত  হবিগঞ্জ সদর-লাখাই-বানিয়াচং- আজমিরীগঞ্জ আসন থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য ছিলেন।রায়বাহাদুর এডভোকেট সতীশ চন্দ্র দত্ত  কিছুদিন ভারতবর্ষের স্পীকারের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৩৬ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় হেনা দাশ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন।

১৯৩৭ সালে সিলেটে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে ( পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী) প্রথম দেখা এবং তাঁর বক্তৃতা শোনা ছিল হেনা দাশের জন্য ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

১৯৩৭ সালে অষ্ট্রম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সিলেটে বৃটিশ বিরোধী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।ছোটবেলা হতেই হেনা দাশ বিপ্লবী ছিলেন। তিনি এতই বিপ্লবী ছিলেন যে চলন্ত ট্রেনে উঠতে পারতেন এবং নামতে পারতেন।

১৯৩৮ সালে  নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য পদ লাভ করেন।

 ১৯৪০ সালে সিলেট অগ্রগামী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। 

১৯৪০ সালে  সুরমাভ্যালি গার্লস স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। হেনা দাশ সহপাঠিদের নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় জনরক্ষা কমিটি গড়ে তোলেন এবং  আত্মরক্ষামূলক প্রশিক্ষণ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৪২ সালে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করেন। 

১৯৪২ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন।

১৯৪৩ সালে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচঙ্গ গ্রামে ম্যালেরিয়ার শতশত লোকের মৃত্যু ঘটে। হেমাঙ্গ বিশ্বাস, কমরেড আদম আলী, হেনা দাশ,কমরেড তুলসী ভট্রাচার্য,ডাঃ গোপেশ বিশ্বাস,কমরেড রুহিনী দাশ,সত্যব্রত দত্ত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে গান গেয়ে চাঁদা তোলেন। সেই টাকা ম্যালেরিয়া রোগীদের মাঝে বিতরন করতেন।

১৯৪৫ সালে মৌলভীবাজার জেলার ভানুবিলে মহিলা আত্মরক্ষা কমিটি গঠন করেন। এ সমিতির সাহায্যে  নারীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রগতিশীল "গণনাট্য সংঘ" এর সঙ্গে যুক্ত হন। 

১৯৪৬ সালের সংগ্রামের জোয়ারের মধ্যেই নেত্রকোণা জেলায় "নিখিল ভারত কৃষক সম্মেলন" অনুষ্ঠিত হয়। নেত্রাকোনার সম্মেলনে লক্ষাধিক সংগ্রামী জনতার সামনে "গণনাট্য সংঘ" এর  শিল্পী হিসেবে প্রথম ও শেষবারের মতো সঙ্গীত পরিবেশন করেন হেনা দাস।

১৯৪৭ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে সম্মেলনে যোগ দিয়ে হেনা দাশ গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। 

১৯৪৭ সালে বিএ পাশ করেন।

১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের প্রথম সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।  ওই সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুনীর চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হেনা দাশ  নির্বাচিত হন।

১৯৪৮ সালের ২৮ জুন সুনামগঞ্জের কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা কমরেড রোহিনী দাশকে বিবাহ করেন। রোহিনী দাশকে বিবাহ করার পর হেনা রানী দত্ত থেকে হেনা দাশ হয়ে গেলেন। কমরেড রুহিনী দাশের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানার পরান বারুংকা গ্রামে। কমরেড রুহিনী দাশের আপন মামাতো ভাই হলেন আসাম পার্লামেন্টের মেম্বার করুনাসিন্ধু রায় ( কমরেড বরুন রায়ের পিতা)। 

১৯৪৮ - ৪৯ সালে সিলেটের নানকার কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। 

১৯৫২ সালে সিলেটের ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ভাষার দাবিতে ছাত্রদের মিছিল-মিটিং ও লিফলেট বিলিতেও  সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এই আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন করে তুলেন।

গোপন আস্তানা থেকে  মেয়েদেরকে ভাষা-আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন।  গ্রেফতারের হওয়ার ভয়ে গোপনে আন্দোলন চালিয়ে যান।

১৯৫৮ সালে সিলেট থেকে ঢাকায় চলে আসেন। 

১৯৫৮ সালে  ঢাকার গেণ্ডারিয়া মনিজা রহমান বালিকা বিদ্যালয়ে  শিক্ষকতার পেশায়  চাকুরীতে যোগ দেন।  

১৯৫৯ সালে ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন। 

১৯৬১ সালে প্রধান শিক্ষিকা পদে নারায়ণগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর ঢাকা মহাখালী ওয়ারলেস স্টেশন স্কুলে  কিছুদিন প্রধান শিক্ষিকার পদে চাকুরী করেন।

১৯৬৪ সালে পুর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিক ডঃ আখলাকুর রহমান এবং কিছু মুসলিম যুবককে নিয়ে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

১৯৬৫ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এমএ প্রথমপর্ব পাশ করেন।

১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে চতুর্থ হয়ে এমএ পাশ  করেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে  ‘মহিলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেন।

১৯৭০ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে যোগ দেন। 

১৯৭১ সালের ১ মার্চ পুর্ব পাকিস্তান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সম্মেলন যশোহরে অনুষ্টিত হয়। হেনা দাশ যশোহর সম্মেলন শেষ করে ঢাকায় ফিরেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান সংসদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষনা করেছে। শিক্ষক নেত্রী হেনা দাশ বর্জন করেন শিক্ষাদান কার্যক্রম। বন্ধ করে দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ঢাকা শহরে বিশাল মিছিল বের করা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। শিক্ষকরা " পুর্ব পাকিস্তান শিক্ষক সমিতি" ব্যানার ছুড়ে ফেলে  দেন। নতুন ব্যানার লিখেন " বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি"। শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসুচী তৈরী ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব হেনা দাশকে দেয়া হয়।

১৯৭১ সালে মে মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়   ৪০০ জনের একটি দল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে ব্রাক্ষনবাড়ীয়ায় যান। তারপর ২৫ /৩০ মাইল পায়ে হেটে প্রথমে ভারতের আগরতলা যান। তারপর  কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় পার্ক সার্কাস লেনে কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্র স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন শরনার্থী শিবিরের বিদ্যালয় প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় শিক্ষক সমিতি বিদেশী সহায়তা পান। তিনি এই সাহায্য দিয়ে শরনার্থী শিবিরে ৫০ টি বিদ্যালয় খুলেন। শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া শিক্ষকদেরকে এসব বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন। শিক্ষকদেরকে  প্রতি মাসে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে সম্মানী ভাতা দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী ও শিশুদের পোশাক এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে বিতরন করতেন। শিশুদের পড়াশুনার জন্য অনেক ভুমিকা রাখেন।

 ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে পরামর্শ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী করনে অনেক ভুমিকা পালন করেন। 

১৯৭৪ সালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে মে দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সাতদিনের মস্কো সফর করে চলে যান উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে।

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে চট্রগ্রামে অনুষ্টিত হয়। প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল প্রধান অতিথি হয়ে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সেই সম্মেলনে বাণী পাঠিয়েছিলেন।

১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জেনারেল  জিয়াউর রহমানের আমলে  শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক থাকাকালে হেনা দাশকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারের আর্শীব্বাদপুষ্ট পাকিস্তানপন্থী মওলানা মান্নানের গুন্ডা বাহিনী ও পুলিশ দিয়ে হেনা দাশ এবং অন্যান্য শিক্ষক নেতাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। হেনা দাশকে কোর্টে চালান দেয়া হয়। পরে কোর্ট থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে পাঠানো হয়। এই মামলা আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

১৯৮৩ সালে জার্মানীতে সফরের সুযোগ পান। ১৫ দিন জার্মানী থাকার সময় ১৪ টি দেশের শিক্ষক সমিতির নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন।

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়াতে আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন FISE র সম্মেলনে যোগ দেন হেনা দাশ।

১৯৮৫ সালে এডুকেশনাল ইন্টারন্যাশনাল গঠনের পর নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডতে অনুষ্ঠিত সার্ক অঞ্চলের মহিলা শিক্ষকদের কর্মশালায় যোগ দেন।

১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে  শিক্ষক সমাজের আন্দোলন করতে গিয়ে শিক্ষক নেত্রী হেনা দাশ ও শিক্ষক নেতা কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়।

শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে ধর্মঘট ডাকা হয়।  প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকার শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করে। এই আন্দোলনের জন্য হেনা দাশকে  গ্রেফতার করা হয়। ১ মাস ৮ দিন পর চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি থাকার  পরে  মুক্তি লাভ করেন। যার জন্য সেই সময়ের এসএসসি পরীক্ষার ডিউটি হাইস্কুলের শিক্ষক সমাজ বয়কট করেন।

১৯৮৭ সালের ৩ জানুয়ারি হেনা দাশের স্বামী কমরেড রুহিনী দাশ পরলোকগমন করেন।

১৯৮৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বহরমপুরে অনুষ্ঠিত অল বেংগল টিচার্স এসোসিয়েশনের সম্মেলনে যোগ দেন।

১৯৮৯ সালে শিক্ষকতার চাকুরি থেকে অবসর নেন। 

১৯৯০ সালে ২৯ এপ্রিল কলকাতায় বাঘাযতীন এলাকায় লাখাই ঐতিহাসিক দত্ত বংশের সকল সদস্যদের নিয়ে একটি পুর্নমিলনী অনুষ্টান করেন। এই অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন কমরেড জ্যোতিময় নন্দী। হেনা দাশের বড় ভাই কমরেড সত্যব্রত দত্ত কার্ড ছাপিয়ে দত্ত বংশের সবাইকে নিমন্ত্রন করেন। এ নিয়ে ভারতের কালান্তর পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টিতেও নেমে আসে হতাশা ও বিভ্রান্তি। কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭২ জন সদস্য ছিলেন। ৫৯ জন সদস্যই কমিউনিষ্ট পার্টি ছেড়ে চলে যান। কমিউনিষ্ট পার্টির অস্তিত্ব রক্ষায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথে নারী নেত্রী হেনা দাশ অবিচল সংগ্রাম চালিয়ে যান।

১৯৯৪ সালে এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক  থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সম্মেলনে যোগ দেন।

১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ অনুষ্ঠানে সিংগাপুরে যোগ দেন।

১৯৯৫ সালের ২০ জানুয়ারি সিলেট এমসি সরকারি কলেজে আয়োজিত "স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিধারন" অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হয়। বক্তব্য রাখেন নারী নেত্রী হেনা দাশ,সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী,কমরেড বরুন রায়,কমরেড লালমোহন রায়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী সুহাসিনী দাস,এ এইচ সাদত খান।

১৯৯৬ সালে শিক্ষা সংগ্রামের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। সেই কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন হেনা দাশ। কমিশনে কাজ করেছেন দিনরাত।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশিত হয় শিক্ষাবার্তা। শিক্ষাবার্তার সম্পাদক ছিলেন হেনা দাশ।

 হেনা দাশ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানের জন্য আজীবন কাজ করেছেন।সমাজটাকে পালটিয়ে দেয়ার মহৎ উদ্দেশ্য থেকেই বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বিলিয়ে দিয়ে গেছেন সারাটা জীবন। স্বীকৃতি পেয়েছেন।পেয়েছেন সম্মাননা। 

জীবনে অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন।  ১৯৯২ সালে শাপলার বিশ বছর পুর্তি উপলক্ষে সংবর্ধনা প্রদান, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, নারায়নগঞ্জ জেলা শাখা সংবর্ধনা প্রদান, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, রোকেয়া হল শাখা নবীন বরন, ২০০১ সালে ড: আহমেদ শরীফ পুরষ্কার, রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার বেগম রোকেয়া পদক-২০০১,সুনামগঞ্জ পৌরসভা পুরষ্কার-২০০৩, বিজনেস প্রফেশনাল ওমেন্স পদক ২০০৩ , সুনামগঞ্জ জেলা কমিউনিষ্ট পার্টি পুরষ্কার-২০০৩, উইমেন্স ডেভোলপমেন্ট ফাউন্ডেশন,  নারায়নগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক জোটের সংবর্ধনা, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি হীরক জয়ন্তী পদক-২০০৪, সিলেটে প্রথম দিনের সুর্য পুরষ্কার, অধ্যাপক আমেশ্বরী পুরষ্কার, জাহানারা স্মৃতি পদক-২০০৫, মহানগর পরিবার দিবস পুরষ্কার-২০০৬ ।

অনেক বই লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বই হল স্মৃতিময়-৭১,সমৃতিময় দিনগুলো, পঞ্চম পুরুষ,লাখাই গ্রামের ইতিহাস নিয়ে আত্নজীবনী গ্রন্থ " চার পুরুষের কাহিনী ",আমার শিক্ষা ও শিক্ষকতা জীবন,নারী আন্দোলন ও কমিউনিষ্ট পার্টির ভুমিকা,নির্বাচিত প্রবন্ধ। বহু দেশে ভ্রমন করেছেন,সেমিনারে গিয়েছেন।

হেনা দাশ একই সাথে কলম চালিয়েছেন। লিখেছেন জাতীয় পত্রিকায়,আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। কোন উচ্চাকাংখায় ছিলেন না, শিক্ষক পেশায় সারা জীবন কাটিয়ে গেছেন।

২০০৯ সালের ২০ জুলাই সবাইকে কাদিয়ে মহিয়সী নারী পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। নারী নেত্রী হেনা দাশ দুই মেয়ে রেখে গেছেন। বড় মেয়ে  ডাঃ দীপা একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। পাশ করেছেন রাশিয়া থেকে। ছোট মেয়ে চম্পা।জিডি আর এ ই ইঞ্জিনিয়ার। ডাঃ দীপা ঢাকায় এবং চম্পা জার্মানীতে বসবাস করেন।

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী নেত্রী হেনা দাশের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। এক শোকবাণীতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেনা দাসের মৃত্যুতে দেশ একজন ত্যাগী ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেত্রীকে হারালো।

তৎকালীন প্রধান বিরোধীদল বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়া শোক বাণীতে বলেন,বাংলাদেশের একজন প্রগতিশীল নারী নেত্রী ও একজন শিক্ষাবিদকে হারালাম।

নারী নেত্রী হেনা দাশ হলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক কমরেড বারীন দত্তের ছোট বোন।

বাংলাদেশ হারিয়েছেন একজন ভাষা সৈনিককে,হারিয়েছেন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে,হারিয়েছেন একজন আদর্শবান শিক্ষক নেত্রীকে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগন তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর পর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল নারায়নগঞ্জে শেষকৃত্য অনুষ্টান করা হয়।

রাজশাহীর একটি প্রতিষ্ঠান হেনা দাশের ওপর একটি অডিওভিজু্য়াল ডকুমেন্টারি তৈরি করেছে।

 নারীপক্ষ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা থেকে প্রকাশিত দুটি বই,  হেনা দাশের সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশিত হয়েছে।

সাহিত্য প্রকাশের মফিদুল হক "মাতৃমুক্তি পথিকৃত" নামে তাঁর জীবনের উপর একটি বই প্রকাশ করেন।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। তাকে একুশে বা স্বাধীনতা পদক দুটোর কোনটাই দেওয়া হয়নি। এ প্রতিবেদনটি তৈরিতে  তথ্য উপাত্ত দিয়ে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন হবিগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এডভোকেট ভলরাম দাশ নিউটন।



Leave Your Comments




নারী অঙ্গন এর আরও খবর