প্রকাশিত : ০৭:২৮
২২ নভেম্বর ২০২১
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৪৪
২২ নভেম্বর ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪২৪টিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে হেরেছেন অন্তত ৪০০ জন। এর মধ্যে জামানতও হারিয়েছেন একাধিক নৌকার প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ১৩১ ইউপিতে প্রতিযোগিতা করতে পারেননি। এমনকি দ্বিতীয়-তৃতীয় অবস্থানেও ছিলেন না ক্ষমতাসীন দল মনোনীতরা।
নৌকার ভরাডুবির পেছনে ইন্ধন রয়েছে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতাদের। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রিপোর্টে এমনটাই উঠে এসেছে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নৌকার বিপক্ষে কাজ করা এক ডজন মন্ত্রী-এমপির নাম দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ তালিকা হস্তান্তর করেন দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নৌকা ডোবানো এমপি-মন্ত্রীদের তালিকা দেখে ক্ষুব্ধ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এসব এমপি-মন্ত্রীরদের বিরুদ্ধ তিনি হার্ডলাইনে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকেই বলেছেন, ‘যারা বিদ্রোহী তাদের ব্যাপারে আমাদের যে চলমান সিদ্ধান্ত রয়েছে সেটা বহাল থাকবে। আর যারা বিদ্রোহীদের মদদদাতা, তারা জেলা-উপজেলা নেতা হোক, কিংবা মন্ত্রী-এমপি হোক, তদন্তসাপেক্ষে যদি প্রমাণিত হয় বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে, তাহলে আগামীতে তাদের কোনো পদে রাখব না, কোনো এমপি মদদদাতা হিসেবে প্রমাণিত হলে তাদের মনোনয়নও দেব না।’
জানা গেছে, বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করা এবং নৌকাডুবির নেপথ্যে কাজ করা এক ডজন এমপির মধ্যে দুজন মন্ত্রিসভার সদস্যও রয়েছেন। একজন ঢাকা বিভাগের আরেকজন সিলেট বিভাগের।
এমপিদের মধ্যে রাজশাহীর একজন, খুলনার একজন, যশোরে একজন, সাতক্ষীরায় একজন, নরসিংদীর দুজন, টাঙ্গাইলের একজন, মৌলভীবাজারে একজন, শেরপুরে একজন, জামালপুরে দুজন এবং নেত্রকোনায় একজনের নাম এসেছে তালিকায়।
এমপি-মন্ত্রী ছাড়াও জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতার নাম এসেছে এ তালিকায়।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী মাঠের চিত্র চেয়েছিলেন। আমরা বাস্তব পরিস্থিতি লিখিত আকারে নেত্রীকে দিয়েছি। ইউপি নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের কার কী ভূমিকা সেটিই তুলে ধরেছি। বাকিটা নেত্রীর সিদ্ধান্ত।’
জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে মোট ১ হাজার ১৯৮টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দলীয় বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। অনেক ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জামানতও হারিয়েছেন।
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, যাকেই নৌকা দেওয়া হয়েছে, দলের প্রতিটি নেতা-কর্মীর উচিত ছিল ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করা। আমরা দেখেছি, অনেক জেলা-উপজেলায় এর ব্যত্যয় ঘটেছে। সেই বিষয়টিই সাংগঠনিক রিপোর্টে তুলে ধরেছি। বিদ্রোহী এবং বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের ব্যাপারে নেত্রী সিরিয়াস। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন নেত্রী।
মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে?-জানতে চাইলে মির্জা আজম বলেন, ‘এমপিদের এখন লিখিতভাবে সতর্ক করবেন। পরবর্তীতে মনোনয়ন বঞ্চিত করাসহ দলের পদ-পদবি থেকে বাদ দিতে পারেন দলীয় সভানেত্রী।’
ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘যত বড় ব্যক্তিই হোক, দলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। দল করতে হলে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে। যারাই ইউপি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেই আমরা রিপোর্ট উপস্থাপন করেছি দলীয় সভানেত্রীর কাছে। এখানে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন।’
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নির্বাচন সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়েছেন, সে রিপোর্টে তারা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিল এবং বিদ্রোহীদের যারা মদদদাতা ছিল তাদের সম্পর্কেও রিপোর্ট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, লিখিত রিপোর্ট এবং তারা নিজেরা মৌখিকভাবেও যার যার এলাকায় কতজন বিদ্রোহী হলো, কারা কারা মদদ দিল, এ রকম অনেক নাম এসেছে। বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছেন তারা নেতা হলে তাদেরও শাস্তি পেতে হবে। জনপ্রতিনিধি হোক, মন্ত্রী হোক, এমপি হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।