প্রকাশিত : ০৫:০৪
২৮ ডিসেম্বর ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে কভিডের সংক্রমণ। বড়দিনের ছুটির মৌসুমের ঠিক আগে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি আবারো বিপর্যয়ে ফেলেছে দেশটির এয়ারলাইনস খাতকে। কভিডের নতুন ধরনটি হাজার হাজার ভ্রমণকারীকে তাদের ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। তবে এ প্রাদুর্ভাব নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও মার্কিন নাগরিকদের ছুটির কেনাকাটায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এপির খবরে বলা হয়েছে, বড়দিনের আগে-পরে মিলিয়ে কয়েক হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছে মার্কিন এয়ারলাইনসগুলো। গতকাল বিকাল পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা ছিল ৬৫৭। এক্ষেত্রে সংস্থাগুলো কোয়ারেন্টিন জটিলতায় কর্মী সংকটকে দায়ী করেছে। তবে স্বাভাবিক ফ্লাইট কখন শুরু হবে, তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই। যদিও ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে খুচরা বিক্রি নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তেমনটা ঘটেনি। ছুটির মৌসুমের বিক্রি ১৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, উড়োজাহাজ ভ্রমণ খাতে চলমান এ ব্যাঘাত কভিডজনিত মন্দা থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতিকে ধীর করে দিতে পারে। ওমিক্রনের সংক্রমণ কিছু ভোক্তাদের ঘরের বাইরে বের হতেও নিরুৎসাহিত করছে। এটি কারখানা ও বন্দরগুলোয় কার্যক্রম বন্ধ এবং পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় বিলম্বের ঝুঁকি তৈরি করেছে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে এরই মধ্যে রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হওয়া মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বাণিজ্য গ্রুপ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেন, মার্কিন অর্থনীতির সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার আবারো বিলম্বিত হবে। তবে ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের এ ধাক্কা কতটা গভীর কিংবা কতদিন স্থায়ী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্রমণ খাত। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার অনুসারে, রোববার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও ছেড়ে যাওয়া ১ হাজার ১০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল। এটি শনিবারের প্রায় এক হাজার থেকে বেশি। গতকাল বিকাল পর্যন্ত প্রায় ৬৫৭টি ফ্লাইট বাতিলের খাতায় নাম লিখেছে।
ইউনাইটেড, ডেল্টা, জেটব্লু ও আমেরিকান এয়ারলাইনস কর্মী ঘাটতির জন্য বাধ্য হয়ে ফ্লাইট বাতিলের কথা জানিয়েছে। সংস্থাগুলো কর্মী ঘাটতির জন্য ওমিক্রনের সংক্রমণকে দায়ী করেছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের মুখপাত্র ম্যাডি কিং এ পরিস্থিতিকে অপ্রত্যাশিত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
সোমবার বিকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এয়ারলাইনসগুলো প্রায় দুই হাজার ফ্লাইট বাতিল করেছিল। আগের দিন এ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা ছিল তিন হাজারেও বেশি। বাতিলের পাশাপাশি ওমিক্রন প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই চলছে ফ্লাইট বিলম্ব। প্রতিদিন কয়েক হাজার ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ছেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও মার্কিন ভোক্তারা তাদের ব্যয় অব্যাহত রেখেছে। নগদ ও ডেবিট কার্ডসহ সব ধরনের পেমেন্ট ট্র্যাক করা মাস্টারকার্ড স্পেনডিংপালস জানিয়েছে, ছুটির মৌসুমের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। বার্ষিক এ বৃদ্ধির হার ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও সংস্থাটি ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বিক্রি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।
১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনাকাটা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পোশাক ও গহনা বিক্রি এ প্রবৃদ্ধির নেতৃত্বে ছিল। প্রাক-কভিড ২০১৯ সালের ছুটির মৌসুমের তুলনায় এবার বিক্রি ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। ওমিক্রন আঘাত হানার পর কিছু গ্রাহক ই-কমার্সে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে সামগ্রিক বিক্রি শক্তিশালী ছিল।
মাস্টারকার্ডের সিনিয়র উপদেষ্টা স্টিভ স্যাডোভ বলেন, এবার ছুটির মৌসুমের বিক্রি নিয়ে আসলেই আমরা সন্তুষ্ট। ওমিক্রনের সংক্রমণে ভোক্তারা সরাসরি দোকানে গিয়ে কেনাকাটায় অস্বস্তি বোধ করলেও তারা অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়েছে। এজন্য দোকানগুলোয় বিক্রি কিছুটা শ্লথগতি দেখা গেছে।