প্রকাশিত :  ০৮:২২
২৭ ডিসেম্বর ২০২১

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬ বছরের কয়লার নিশ্চয়তা

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬ বছরের কয়লার নিশ্চয়তা


কয়লা সংকটে ৫২৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন করছে। তবে সম্প্রতি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে আরো এক লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনা কনসোর্টিয়াম এক্সএমসি ও সিএমসি। মজুদ সক্ষমতা অনুসারে উত্তোলন বাড়ানো গেলে আগামী ছয় বছর বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়লা সরবরাহ করা যাবে বলে জানায় বাংলাদেশ কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)।

নতুন চুক্তি অনুযায়ী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ৩১ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা চীনা কনসোর্টিয়াম এক্সএমসি ও সিএমসির।

বিসিএমসিএল সূত্রে জানা গেছে, খনির ১৩১০ ফেইসে আগের সম্ভাব্য তিন লাখ টন কয়লা মজুদের পাশাপাশি অতিরিক্ত এক লাখ টন কয়লা রয়েছে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে।

বিসিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বণিক বার্তাকে বলেন, কয়লা উত্তোলনে চীনা জরিপে অতিরিক্ত এক লাখ টন কয়লা মজুদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ পরিমাণ কয়লা যদি উত্তোলন করা যায়, তাহলে আশা করছি আগামী ছয় বছর পর্যন্ত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়লা সরবরাহ করা যাবে।

এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে খনির দায়িত্বে থাকা চীনা কোম্পানি এক্সএমসি-সিএমসির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করেছে বিসিএমসিএল। কয়লা উত্তোলনে চতুর্থ মেয়াদে ৭২ মাস মেয়াদি এ চুক্তি হয়। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা চীনাদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধি বড়পুকুরিয়া কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বড় সুখবর। উৎপাদন বাড়ানো গেলে কেন্দ্রটি পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বাড়ানো গেলে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যা অনেকটাই নিরসন হবে।

বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। উৎপাদিত কয়লার সবটুকুই সেখানকার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হচ্ছে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। সেচ মৌসুম ও ওই অঞ্চলে জনগোষ্ঠীর বিদ্যুৎ সরবরাহে কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে দুর্নীতির কারণে কয়লা সংকটে পড়লে ২০১৮ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির। পরবর্তী সময়ে মজুদকৃত কয়লা দিয়ে কেন্দ্রটির সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদন চালু করা হয়। বর্তমানে উত্তোলন করা কয়লায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১৫০-২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে আগের ভ্যারিয়েশন অর্ডারে এক লাখ টন কয়লা উত্তোলনের কথা ছিল চীনা কনসোর্টিয়ামটির। কিন্তু কভিডের কারণে নানামুখী জটিলতা তৈরি হওয়ায় তারা ৫০ হাজার টনের মতো কয়লা উত্তোলন করে। এরই মধ্যে চলতি বছরের আগস্টে কয়লা উত্তোলন চুক্তি শেষ হয়ে যায়। নতুন চুক্তির জন্য খনিতে নিয়োজিত কোম্পানিটি পুনরায় চীনা কনসোর্টিয়ামকে নতুন করে কয়লা উত্তোলন চুক্তি চূড়ান্ত করে। তবে আগের চুক্তি অনুযায়ী এখনো ৫০ হাজার টন কয়লা উত্তোলন বাকি রয়েছে।

বিসিএমসিএল বলছে, চীনা কোম্পানি বড়পুকুরিয়া থেকে আগের চুক্তির ৫০ হাজার টন কয়লা উত্তোলনে কাজ করছে। দৈনিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। দুই শিফটে বর্তমানে ১২৬ জন স্থানীয় শ্রমিক কয়লা উত্তোলনকাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লার মজুদ আবিষ্কারের তথ্য অনুযায়ী, খনির ১৩১০ ফেইসে তিন হাজার টন কয়লা মজুদ রয়েছে। কয়লা উত্তোলনের চতুর্থ চুক্তি অনুযায়ী, আগামী বছরের শুরুতে নতুন চুক্তি অনুযায়ী কয়লা উত্তোলনে চীনা কোম্পানিটি কাজ শুরু করবে। এরই মধ্যে খনিতে নিয়োজিত চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খনিতে তিন লাখের বাইরে আরো অতিরিক্ত এক লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে। এর ফলে বর্তমানে খনিতে চার লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে।

খনিতে কয়লার অতিরিক্ত মজুদ সক্ষমতা আবিষ্কারের পর সংশ্লিষ্ট অনেকেই ধারণা করছেন কয়লার উত্তোলন বেড়ে যাবে এবং বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে কয়লা সরবরাহ বাড়ানো যাবে। তবে বিসিএমসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত মজুদ সক্ষমতা আবিষ্কার হলেও গড়ে যে আড়াই থেকে তিন হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে সেটিই হবে। তবে চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করা যাবে কিনা অনিশ্চয়তা ছিল, এখন তা অনেকটাই কেটে গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, সম্ভাব্য মজুদের বাইরে নতুন করে অতিরিক্ত মজুদ আবিষ্কার দেশের জন্য বড় সুখবর। মজুদ আবিষ্কারের বাইরে অতিরিক্ত মজুদ সক্ষমতা দেশীয় কোম্পানির কয়লা কেনার ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে কিছুটা সুবিধা তৈরি করে। তবে তার চেয়ে বড় কথা, কয়লা উত্তোলনে আমরা নতুন কিছু ভাবছি কিনা। বড়পুকুরিয়ায় আমাদের যে কয়লা রয়েছে তা দু-এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ফলে অন্য খনি থেকে কয়লা উত্তোলনে এখনই পরিকল্পনা করা দরকার।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে মোট ৩৯ কোটি টন কয়লার মজুদ রয়েছে। ২০০৫ সালে খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। তিনটি চুক্তির আওতায় চীনা কনসোর্টিয়ামটি এ পরিমাণ কয়লা উত্তোলন করেছে। বর্তমানে চতুর্থ চুক্তির আওতায় তারা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ চূড়ান্ত করেছে।


Leave Your Comments




জাতীয় এর আরও খবর