প্রকাশিত : ০৭:৫৫
২৬ ডিসেম্বর ২০২১
কথা নেই। থাকবে কীভাবে? নির্বাক চলচ্চিত্র যে! কিন্তু কথা থাকা, না থাকায় কিছু যায় আসে না। কেননা, যা বলার, তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনে, ফেসিয়্যাল এক্সপ্রেশনেই সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয়ে পড়ছে। দর্শক হেসে লুটিয়ে পড়ছে। অথবা হাসির মোড়কেই তার বুকে জাগছে মোচড়। হাসি-হাসি আবার হাসি-কান্না।
হাসিতে কান্না? নয়তো কী? না হলে স্বয়ং ওই শিল্পের স্রষ্টা কেন বলবেন, ‘আমি বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালোবাসি, কারণ তখন কেউ আমার কান্না দেখতে পায় না।’ এই উক্তিটি তার, যিনি নিজের চোখের পানি আড়াল করে শুধু মূকাভিনয়ের মাধ্যমে অগণিত মানুষের মুখে হাসি জুগিয়েছেন। তিনি চার্লি চ্যাপলিন।
বিশ্ব ফিল্ম সংস্কৃতির এক মরমি ঐতিহ্যের ধারক বাহক চার্লি। বিশ্ব চলচ্চিত্রে তার বিপুল অবদান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস চার্লি চ্যাপলিনের ছ'টি ছবিকে জাতীয় চলচ্চিত্র রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণ করেছে। এগুলো হল- ‘দ্য ইমিগ্র্যান্ট’, ‘দ্য কিড’, ‘দ্য গোল্ড রাশ’, ‘সিটি লাইটস’, ‘মডার্ন টাইমস’ ও ‘দ্য গ্রেট ডিরেক্টর’।
এ ছাড়া চার্লির উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেকিং অব লিভিং (১৯১৪), দ্য ট্রাম্প (১৯১৪), কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস (১৯১৫), এ ডগস লাইফ (১৯১৭), শোল্ডার আর্মস (১৯১৮), দ্য সার্কাস (১৯২৬), লাইম লাইট (১৯৫২), এ কিং অব নিউইয়র্ক (১৯৫৭) প্রভৃতি।
তথ্য দিয়ে চার্লিকে ধরা যায় না। তিনি একমুঠো হাসি অথবা অগাধ কান্না। চার্লি সবার আগে একজন সার্থক অভিনেতা। তবে তারও আগে তাকে দাগানো হয় ‘কমেডিয়ান’ তকমায়। কমেডি সাধারণত দুই ধরনের। ‘স্ট্যান্ড-আপ কমেডি’ এবং ‘স্ল্যাপস্টিক্স কমেডি’।
প্রকৃতিগত ভাবে চার্লি ‘স্ল্যাপ্সটিকস কমেডিয়ান’। কিন্তু তার শিল্পসৃষ্টি দেখতে দেখতে কোথাও গিয়ে যেন মনে হয় ‘স্ট্যান্ড-আপ কমেডি’ ও ‘স্ল্যাপ্সটিকস কমেডি’র এই তাত্ত্বিক বিভাজনটাকে আর খুব বড় করে দেখার দরকার নেই। এখানে পারফরম্যান্সটাই আসল কথা। সেখানে চার্লি চ্যাপলিন আজও এক ও অদ্বিতীয়। বিশ্বের এমন খুব কম চলচ্চিত্র পরিচালক বা অভিনেতাকেই পাওয়া যাবে, যিনি বা যারা কখনও চার্লির কাজের দ্বারা অনুপ্রাণিত হননি।
২৫ ডিসেম্বর ছিল সেই চার্লির মৃত্যুদিন। নিপীড়িত দুঃখিত যন্ত্রণাকাতর মূক মানুষগুলোর মুখে ভাষা জুগিয়েছেন তিনি। তাদের কষ্টটার একটি ‘সেফটি ভালভ’ যেন তিনি। কিংবা বলা যায়, সেই দুঃসহ রাগ ও কষ্টটাকে তিনি নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে ‘ভেন্টিলেট’ করেছেন। তার এই চির উপস্থিতিই কৌতুকশিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে যুগে যুগে।