প্রকাশিত :  ০৫:৫১
২৬ ডিসেম্বর ২০২১

মহামারীতে ১১০ পেপার মিলের ৮০টিরই উৎপাদন বন্ধ

মহামারীতে ১১০ পেপার মিলের ৮০টিরই উৎপাদন বন্ধ


দেশের পেপার মিলগুলোর উৎপাদিত পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই লেখা এবং ছাপার কাগজ, যা শিক্ষার অন্যতম উপকরণ। তবে চলমান মহামারীতে প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনলাইনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সীমিত রয়েছে অফিস-আদালতের কার্যক্রমও। ফলে ধস নেমেছে কাগজ পণ্য বিক্রিতে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে না পেরে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন ছোট পেপার মিলের মালিকরা। বর্তমানে দেশের ১১০টি পেপার মিলের মধ্যে ৮০টিরই উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এদিকে উৎপাদন বন্ধ, পণ্য মজুদ বৃদ্ধি, পরিচালন ব্যয় ও ব্যাংকঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ অবস্থায় ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড়সহ দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার দাবি উঠেছে। সম্প্রতি পেপার শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা চেয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিপিএমএ বলছে, মহামারীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাতগুলোর মধ্যে দেশীয় কাগজ শিল্পের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। প্রায় দুই বছর ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং দফায় দফায় লকডাউন ঘোষণার ফলে অফিস-আদালতে উপস্থিতি কমে কাগজের চাহিদা শূন্যের কোঠায় নেমে যায়। চাহিদার অভাবে এরই মধ্যে দেশের ১১০টি পেপার মিলের মধ্যে ৮০টিরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন ও বিক্রির উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় এবং কভিডে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা নজিরবিহীন আর্থিক সংকটে পড়েছেন। গত দুই বছর করোনার প্রাদুর্ভাবে সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব মোকাবেলা করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য কাগজ শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদি ব্যবসা পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিপিএমএ।

বিপিএমএ আরো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজ উৎপাদনের অন্যতম কাঁচামাল পাল্পসহ অন্যান্য উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানির জন্য মালবাহী কনটেইনার সংকটে পরিবহন ব্যয় বহুগুণ বেড়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী ব্যবসার এ ক্রান্তিকালে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা না পেলে বিপুল সম্ভাবনাময় দেশীয় কাগজ শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এতে করে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার লোক বেকার হয়ে পড়বে।

বিপিএমএর পক্ষ থেকে বর্তমানে ৮০টি পেপার মিলের উৎপাদন বন্ধের কথা বলা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সবগুলো মহামারীর কারণে বন্ধ হয়নি। বড় গ্রুপের মিলের আধিপত্য ও বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মহামারীর আগেই কিছু ছোট পেপার মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

কাগজ শিল্পের ঋণগ্রহীতা ও শিল্পোদ্যোক্তাদের আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দুটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেছে বিপিএমএ। এগুলো হচ্ছে কাগজ উৎপাদন, মুদ্রণ ও প্রক্রিয়াকরণ খাতের ব্যবসার প্রতিকূল অবস্থা বিবেচনায় গৃহীত ঋণ খেলাপি না করার সময়সীমা আগামী ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা। পাশাপাশি ডাউন পেমেন্টের টাকা জমা দেয়ার শর্ত প্রত্যাহার করে ঋণ হিসাবের ওপর আরোপিত ও অনারোপিত সব ধরনের সুদ ও অন্যান্য চার্জ মওকুফ করা। এছাড়া মওকুফ করে অবশিষ্ট ঋণের টাকা দুই বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে সুদবিহীন পরিশোধের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা।

এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে বিপিএমএর সভাপতি আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, কভিডের প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে গত দুই বছর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি বিধিনিষেধ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনমুখী শিল্পের সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ অবস্থায় চলতি মূলধনের অভাবে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ব্যয় নির্বাহ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করে ব্যবসা ও শিল্প-কারখানার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা ও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ বিলম্বিত করার নির্দেশ দিলে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা গভীর সংকটের মধ্যেও আশার আলো দেখতে পান। তবে করোনার নেতিবাচক প্রভাব প্রলম্বিত হওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে না পারায় সুদে-আসলে ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীরা বিশ্বাস করেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বাস্তবতার আলোকে ঋণ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে দুই বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিলি কারার বিষয়ে সদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

কাগজ শিল্প খাতে প্রত্যক্ষভাবে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। দেশের কাগজ মিলগুলো অফসেট, নিউজপ্রিন্ট, লেখা ও ছাপার কাগজ, প্যাকেজিং পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড, মিডিয়া পেপার, লাইনার, স্টিকার পেপার, সিকিউরিটি পেপার এবং বিভিন্ন গ্রেডের টিস্যু পেপার উৎপাদন করে। তবে উৎপাদিত পণ্যের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই শিক্ষার অন্যতম উপকরণ লেখা ও ছাপার কাগজ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো বিপিএমএর চিঠিটি গত ৯ ডিসেম্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্যাহ হারুন পাশা বণিক বার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কী করা যায় তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।


Leave Your Comments




শিল্প বাণিজ্য এর আরও খবর