প্রকাশিত : ০৭:৩৮
০২ এপ্রিল ২০২৩
কলা গাছের তন্তু থেকে প্রথমবারের মতো শাড়ি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মৌলভীবাজারের বুনন শিল্পী রাধাবতী। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরিজি। বুনন শিল্পীর নামের সঙ্গ মিল রেখে তিনি শাড়ির নাম রেখেছেন ‘কলাবতী’
গত কয়েক বছর ধরেই দেশে কলা গাছের তন্তু তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ তন্তু ব্যবহার করে হস্তশিল্প সামগ্রী যেমন- ব্যাগ, জুতা ও ফাইল বানিয়ে বিক্রি করছেন উদ্যোক্তারা। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এসব পণ্য।
এরই মধ্যে জেলার উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে বিভিন্ন পাড়ায় তরুণ-তরুণীদের কলা গাছের তন্তু থেকে হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন তারা ব্যাগ, জুতা, ফাইল, পাপোস, ফুলদানি ও কলমদানিসহ নানা হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করছেন। এবার কলা গাছের তন্তু থেকে আরও শাড়ি বানানো শুরু হলে স্থানীয়রা অনেক উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং অর্থনৈতিকভাবে তাদের স্বাবলম্বী করতে ২০২১ সালে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। এ প্রকল্পের আওতায় কলা গাছ থেকে তন্তু তৈরি এবং তা থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি শুরু হয়।
পরে বিভিন্ন উদ্যোক্তার সমন্বয়ে জেলার বিভিন্ন পাড়ায় তরুণ-তরুণীদের কলা গাছের তন্তু থেকে হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা এখন ব্যাগ, জুতা, ফাইল, পাপোস, ফুলদানি ও কলমদানিসহ নানা হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করছেন।
এছাড়াও তাদের তৈরি এসব হস্তশিল্প পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য নীলাচল পর্যটনে ‘ব্র্যান্ডিং বান্দরবান’ নামে একটি দোকানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে কলা গাছের তন্তু থেকে তৈরি এসব হস্তশিল্প সামগ্রী সারাদেশের মানুষের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
ধীরে ধীরে কলা গাছের তন্তুর তৈরি হস্তশিল্প পর্যটকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়। পরে এ সফলতাকে পুঁজি করে বিশেষ এ তন্তুর শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। তবে জেলার কারিগররা শাড়ি তৈরির প্রস্তাবে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পরে সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে বুনন শিল্পী রাধাবতীকে বান্দরবান নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় এক উদ্যোক্তার মাধ্যমে তাকে দিয়ে প্রথমবারের মতো কলা গাছের তন্তুর শাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ১৫ দিনের চেষ্টায় বুনন শিল্পী রাধাবতী এক কেজি সুতা দিয়ে তৈরি করেন প্রথম শাড়ি ‘কলাবতী’।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘কলা গাছের তন্তু থেকে প্রথমবারের মতো বান্দরবানে শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। আমাদের জনবল আছে; তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো আমরা সনাতন পদ্ধতিতে শাড়িটি বানিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে তৈরির জন্য এরই মধ্যে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’
ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘পর্যটন নগরী বান্দরবানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক বেড়াতে আসেন। মূলত পর্যটকদের কথা চিন্তা করে কলা গাছের তন্তু থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে আসছেন স্থানীয় নারীরা। পর্যটকদের কাছে এসব হস্তশিল্প সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কম খরচে স্বল্প সময়ে কলা গাছের তন্তু থেকে আর কী তৈরি করা যায়, সে ভাবনা থেকেই শাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথমবারেই আমরা সফল হয়েছি। আশা করি, কলা গাছের তন্তুর শাড়ি কলাবতী পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হবে।’
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে এ শাড়ি উৎপাদন সম্ভব হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি তারা আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। এছাড়া বান্দরবান ছাড়াও দেশের আলাদা আলাদা ব্র্যান্ডিং হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রাথমিকভাবে শাড়ি তৈরিতে ১৮০ টাকার সুতা ব্যবহার হয়েছে। তবে সময় ও শ্রম বেশি লাগায় শাড়ির বিক্রয় মূল্য ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।